প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: মাতৃমৃত্যু বা প্রসবকালীন মৃত্যু চিরকালই এদেশের অন্যতম চিন্তার বিষয়। নগরকেন্দ্রিক জীবনের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও প্রসবকালীন মৃত্যু ঠেকানো বরাবর চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পূর্ববর্তী এবং বর্তমান সরকারের কাছে। সেই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে প্রসবকালীন মৃত্যুতে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি বা হ্রাস টানতে সক্ষম হল কেন্দ্রীয় সরকার। এদিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মনসুখলাল মাণ্ডব্য দাবি করেছেন, ইউপিএ সরকারের জমানার তুলনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার মাতৃমৃত্যু বা প্রসবকালীন মৃত্যুর হার কমাতে সক্ষম হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দাবি, ২০১৪-১৬ সালে প্রতি লাখে ১৩০ মহিলার যেখানে প্রসবকালীন মৃত্যু হয়েছে, সেখানেই মোদি ২.০ এর সময়ে ২০১৮-২০ অর্থবর্ষে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা মাত্র ৯৭৷ এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মান্ডব্য জানিয়েছেন, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে ১৩০, ২০১৫-১৭ সালে ১২২, ২০১৬-১৮ সালে ১১৩, ২০১৭-১৯ সালে ১০৩ ও সর্বশেষ সমীক্ষায় ২০১৮-২০ সালে প্রতি লাখে ৯৭ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে, যা এ যাবৎ সর্বনিম্ন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুপ্রেরণায় দেশের মায়েদের জন্য বরাদ্দ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও প্রসবকালীন সুযোগ সুবিধার জন্য প্রসূতি বা মাতৃমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হয়েছে।’ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও বিশেষ করে মাতৃত্বকালীন পরিকাঠামোয় উন্নতি সাধনের ফলেই এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখলাল মাণ্ডব্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই কৃতিত্বে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। মোদি টুইট করে জানান, এই পরিবর্তন অত্যন্ত আনন্দদায়ক ও অনুপ্রেরণার। দেশের মহিলাদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান নারী স্বশক্তিকরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকার দেশের মায়েদের প্রতি দায়বদ্ধ। তাদের সুস্থতা ও সুরক্ষা সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এসআরএস (স্যাম্পেল রেজিস্ট্রেশন সার্ভে) নির্ভর কেন্দ্রীয় অনুসন্ধান পর্বে জানা গিয়েছে, দক্ষিণী রাজ্য কেরলে প্রসবকালীন মৃত্যুর হার সর্বনিম্ন। এরাজ্যে এমএমআর (মেটারনল মর্টালিটি রেশিও) ১ লাখে মাত্র ১৯। এর পরেই আছে কেসি রাও এর রাজ্য তেলেঙ্গানা, যার প্রসবকালীন মৃত্যুর সংখ্যা ৪৩। তার পরেই রয়েছে একনাথ শিণ্ডের রাজ্য মহারাষ্ট্র। প্রসূতিকালীন মৃত্যুর হার সর্বাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় জানা গিয়েছে ২০১৮-২০ অর্থবর্ষে অসমে মাতৃমৃত্যুর সর্বাধিক সংখ্যা প্রায় ১৯৫। এর পরেই আছে শিবরাজ সিং চৌহানের মধ্যপ্রদেশ, যেখানে ১৭৩ জন প্রসূতি মারা গেছেন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশ সেখানে গত ২০১৮-২০ স্বাস্থ্যবর্ষে মোট ১৬৭ জন মা প্রসবকালীন মৃত্যুর মুখে পড়েছেন। বাংলার অবস্থাও তথৈবচ, ২০১৮-২০ স্বাস্থ্যবর্ষে এই রাজ্যে প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি লাখে ১০৫ জন, যা পঞ্জাবের সমান।
উল্লেখ্য, সামগ্রিক ভাবেই অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলায় মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হার একটু বেশি বলে কেন্দ্রীয় সমীক্ষার তথ্যে উঠে এসেছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। কারণ জানতে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি বা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য ভবন। প্রসূতি মৃত্যু ঠেকাতে স্বাস্থ্য পরিষেবার সব স্তরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিয়ে গঠন করা হয়েছে নজরদারি কমিটি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘প্রসবকালীন মৃত্যু একটি দীর্ঘকালীন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সমস্যা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী প্রকল্প হয়তো সেই সমস্যায় আগামী দিনে আস্তে আস্তে পরিবর্তন নিয়ে আসবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আনতে যে সামাজিক বিপ্লব দরকার, সেটা সর্বস্তর থেকে শিক্ষার হার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সহ নানা রকমের বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে। তাই অতি দ্রুত সেখানে সাফল্য অর্জন করা কষ্টকর।’
আরও পড়ুন : রাত পোহালেই গুজরাট বিধানসভা নির্বাচন, ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় কংগ্রেস, বিজেপি, আপ