শিলিগুড়ি : করোনাকে কেন্দ্র করে আতঙ্কের পরিবেশ সর্বত্র। কিন্তু মারণব্যাধিকে ঘিরেই আশার আলো দেখছে মংপু। কোভিড-১৯ এর মোকাবিলায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের উপাদান সিঙ্কোনার দিকে রাজ্য নজর দিতেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে এখানকার কর্মী এবং এলাকার বাসিন্দারা। নতুন করে কুইনাইন তৈরি হলে এলাকায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। রাজ্য সরকারের নির্দেশে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিযান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইিআই)। বিশেষজ্ঞদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে সিকিমের বিশেষজ্ঞদেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। সিআইআইযে উত্তরবঙ্গের চেযারম্যান সঞ্জিত্ সাহা বলেন, ‘পরিকাঠামো উন্নয়নে কী কী করতে হবে, সেই সংক্রান্ত বিপোর্ট তৈরির জন্য রাজ্য সরকার আমাদের জানিয়েছে। রিপোর্ট তৈরির জন্য আমরা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছি। সরকারি সাহায্য পেলে ল্যাবরেটারি চালুর ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখিয়েছেন কয়েকজন শিল্পপতি।’ সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশনের চেয়ারম্যান স্যামুয়েল রাই বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে ল্যাব চালুর দাবি উঠছে। রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমরা খুশি। আশা করছি দ্রুত উৎপাদন শুরু হবে।’ দার্জিলিংয়ে সাংসদ রাজু বিস্টের দাবি, করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার পরই সিঙ্কোনা চালুর ব্যাপারে তিনি বিভিন্ন মহল থেকে ফোন পেয়েছেন। সিঙ্কোনা চালু হলে দার্জিলিং এবং কালিম্পং পাহাড়ের আর্থসামাজিক অবস্থার বিকাশ ঘটবে। সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশনকে পুনর্জীবিত করার প্রস্তাব কয়েক বছর আগে রাজ্য সরকারকে দিয়েছিল নর্থবেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেন, ‘রাজ্যের উদ্যোগ যথেষ্ট ইতিবাচক। সবরকম সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত।’
করোনা সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশনকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। রোগ প্রতিরোধে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের চাহিদা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গুরুত্ব পাচ্ছে কুইনাইনের আঁতুড়। দার্জিলিং জেলার মংপুর সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশন থেকে শেষবার কুইনাইন তৈরি হয়েছিল প্রায় দুই দশক আগে। ২০০১ সালে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পর অনেক আন্দোলন দেখেছে পাহাড়। কিন্তু সেই দাবি পূরণে সদিচ্ছা দেখায়নি সরকার। কিন্তু করোনার জেরে এখন সিঙ্কোনাতেই নজর পড়েছে রাজ্য সরকারের। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশনকে কীভাবে পুনর্জীবিত করা যায, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওযা শুরু হয়েছে। এই ক্ষেত্রে সিআইআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। তাঁর নির্দেশে শুক্রবার বৈঠক করে সিআইআই। প্ল্যান্টেশনকে পুনর্জীবিত করার সম্ভাবনা কতটা রয়েছে, এই ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ করতে হবে, সমস্ত কিছুই খতিযে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। একইসঙ্গে ল্যাবগুলি চালুর ক্ষেত্রে কী ধরনের সাহায্য প্রয়োজন, তার জন্য সিকিমের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওযার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এদিনের বৈঠকে। সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান বলেন, ‘উৎপাদনের ক্ষেত্রে ল্যাবগুলি চালু করা প্রয়োজন। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’
প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের তত্ত্বাবধানে ১৮৬২ সালে মংপুতে গড়ে ওঠে সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশন। কুইনাইন উৎপাদন শুরু হয় ১২ বছর পর। বর্তমানে বছরে উৎপাদন হয় দেড় থেকে দুই লক্ষ কেজি। কর্মী রয়েছেন প্রায় চারশো।
ছবি- মংপুর সিঙ্কোনা প্ল্যানটেশন।
তথ্য- সানি সরকার