প্রকাশ মিশ্র, মানিকচক : মানিকচকের সঙ্গে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের বিস্তীর্ণ সীমান্ত রয়েছে। কিন্তু পুলিশি নজরদারির অভাবে মানিকচকে আন্তঃরাজ্য সীমানার নদীপথে ভিনরাজ্য থেকে শ্রমিকরা অবাধে ঢুকে পড়ছেন। লকডাউনের মধ্যে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঝাড়খণ্ড হয়ে মানিকচকে পরিযায়ী শ্রমিকরা আসছেন। এঁদের কোনও স্ক্রিনিং না হওয়ায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারয। বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সিটুর মালদা জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহা। পুলিশের বজ্র আঁটুনির মধ্যেও পরিযায়ী শ্রমিকদের এখন নিরাপদ করিডর আন্তঃরাজ্য সীমানার জলপথ। গঙ্গা-ফুলহর পেরিয়ে মানিকচক সহ উত্তর মালদায় ফিরছেন পরিয়াযী শ্রমিকরা। এদের কোনও স্ক্রিনিং না হওয়ায় করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা নিয়ে প্রহর গুনছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দেবজ্যোতিবাবুর অভিযোগ, এখন লকডাউন চলছে। প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে শ্রমিকরা যে য়েখানে আছেন, সেখানেই থাকুন। কোনওভাবেই রাজ্যে আসার চেষ্টা না করেন। সেই নিষেধাজ্ঞাকে তুড়ি মেরে প্রচুর শ্রমিক জেলায় ঢুকছেন। বিশেষ করে মানিকচক সহ উত্তর মালদায় এরা আসছেন। আর এর জন্য নিরাপদ করিডর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে আন্তঃরাজ্য সীমানার নদীপথকে। ঝাড়খণ্ডে কড়াকড়ি কম থাকায় খুব সহজেই সেখান থেকে নৌকা করছেন ভিনরাজ্য থেকে আসা শ্রমিকরা। ৫-৭ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ভোর অথবা সকালে তাঁরা এপারে আসছেন। দিন সাতেক ধরেই এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মানিকচক ঘাটে লঞ্চ, নৌকা, ভুটভুটি পরিষেবাও বন্ধ রয়েছে। জায়গায় জায়গায় পুলিশের নজরদারি রয়েছে। তাই এই পথে পরিযায়ী শ্রমিকরা ঢুকতে পাচ্ছেন না। দেবজ্যোতিবাবুর অভিযোগ, এই শ্রমিকরা নিরাপদ করিডর হিসেবে মানিকচক ও মথুরাপুরে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলিকে বেছে নিচ্ছেন। তিনি এজন্য পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারির অভাবকেই দায়ী করেছেন। অন্তত ১৫ দিন আরও আমাদের এই ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে বলে সমস্ত স্তর থেকে সতর্ক করা হচ্ছে। এই শ্রমিকদের বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
কথা হচ্ছিল পশ্চিম নারায়ণপুরের গ্রামবাসী কৃষ্ণ মণ্ডলের সঙ্গে। নদী তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণবাবু বলেন, প্রতিদিন সকাল এবং ভোরে দেখছি, ঝাড়খণ্ড থেকে প্রচুর মানুষ নৌকা করে এপারে এসে নামছেন এবং কোথায় যেন চলে যাচ্ছেন। জিজ্ঞেস করলে দৌড় দিচ্ছেন। অনেকে বলছেন, রতুয়ার বিলাইমারি প্রভৃতি এলাকায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। জ্বর বা কোনও উপসর্গের পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়াই তাঁরা মালদায় ঢুকছেন। এঁদের মধ্যে আদৌ কতজন সংক্রামিত আছেন, তা বোঝার কোনও উপায় নেই। বৃহস্পতিবার শঙ্করটোলা ও কালিতলা ঘাটের সংযোগস্থলে ফুলহর নদীর পাড়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিক নামেন। ওই শ্রমিকরা বলেন, তাঁরা কেউ মালতীপুর, কেউ চাঁচল, রতুয়ার শ্রীপুর প্রভৃতি এলাকায় যাবেন। ওপারে ঝাড়খণ্ডের কোনও পুলিশের নজরদারি ছিল না। পরে মথুরাপুরে নামার পরেও কেউ পুলিশের দেখা পাননি। ফলে সহজেই চলে আসতে পেরেছেন।
মানিকচকের বিডিও সুরজিৎ পণ্ডিত বলেন, বিভিন্ন এলাকা সিল করে দিয়েছে পুলিশ। তারপরেও কেন এরকম হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। মানিকচকের ওসি গৌতম চৌধুরী বলেন, সীমানা সিল করে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। কোনওরকম যানবাহন পারাপার হচ্ছে না। যে এলাকার কথা বলা হচ্ছে, সেটি ভূতনি থানার মধ্যে পড়ে। ভূতনি থানার ওসিকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি দেখছেন। অন্যদিকে ভূতনি পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, মূল জায়গাগুলিতে তাঁদের নজরদারি রয়েছে। কিন্তু নদীপথজুড়ে কর্মী মোতায়ে করা বাস্তবসম্মত নয়। কে কোথায় কখন নৌকা করে এসে নেমে যাচ্ছেন, তা বুঝে ওঠা দায়। তবু নজরদারি বাড়ানো হবে।