শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : ১৯ বছর ধরে চলছে পঠনপাঠন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) নথিভুক্ত হয়নি মিরিক কলেজের নাম। যে জমিতে কলেজ তৈরি হয়েছে, সেটির মালিক পর্যটন দপ্তর। ফলে ন্যাক-এর মূল্যায়নও হয়নি। জমি হস্তান্তর না করে কলেজ তৈরি করে ফেলেছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। ইউজিসির আর্থিক অনুদান না পাওয়ায় পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ থমকে রয়েছে। বিভিন্ন পরিসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা।
২০০০ সাল থেকে মিরিক কলেজের পঠনপাঠন শুরু হয়। শুরুতে মিরিক ডাকবাংলো এলাকায় ব্লক প্রশাসনের কয়েকটি ঘরে ক্লাস নেওয়া হত। পরে সেখানে পরিকাঠামো উন্নয়ন করে রাজ্য সরকার। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে তখনও জমির কোনো কাগজ ছিল না। এরপর জিটিএর পক্ষ থেকে মিরিক পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন কলেজ ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সাল থেকে নতুন ভবনে চলছে পঠনপাঠন। তবে এখন পর্যন্ত কলেজের নামে জমি হস্তান্তর হয়নি। মিরিক মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩ একর জমির উপর তৈরি হয়েছে কলেজ ভবন। দার্জিলিং জেলা ভূমি ও ভূমিসংস্কার দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, জিটিএর ভুলেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। কলেজ তৈরির আগে জমি হস্তান্তর করতে হত। সেই নিয়ম মানেননি তৎকালীন জিটিএ কর্তারা।
কলেজের অধ্যক্ষ সুবলচন্দ্র বর্মন জানান, কলেজের নতুন ভবন ও ছাত্রাবাস তৈরি, শিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজকর্ম, খেলাধুলা ও পাঠাগারের পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ বিভিন্ন খাতে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান দেয় ইউজিসি। সেই অনুদান পাওয়ার জন্য ইউজিসিতে কলেজের নাম নথিভুক্ত থাকতে হয়। এর জন্য পদ্ধতি মেনে কলেজের নামে জমির কাগজ জমা দেওয়াটা বাধ্যতামূলক। তাঁদের কাছে জমির কোনো কাগজ নেই। তাই তাঁরা নাম নথিভুক্ত করতে না পারায় অনুদান পাচ্ছেন না। অধ্যক্ষ বলেন, ‘পরিকাঠামো না থাকায় বর্তমানে কলেজে শুধুমাত্র কলাবিভাগে পড়ানো হচ্ছে। এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য কলেজে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগ চালু করা অত্যন্ত জরুরি। ইউজিসির অনুদান পেলে সহজেই পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করা যেত। অনেক আগেই জিটিএ এবং জেলা প্রশাসনের কাছে জমি হস্তান্তরের জন্য আবেদন জানিয়েছি।’ জমির কাগজ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে রাজ্য শিক্ষা দফতরের অনুদান পেতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান অধ্যক্ষ। তিনি আরও জানান, কলেজের জমির কাগজ না থাকায় অধ্যাপকরাও বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের জন্য ইউজিসির অনুদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মিরিকের মহকুমাশাসক এবং কলেজ পরিচালন সমিতির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক প্রধান অশ্বিনীকুমার রায় জানান, ভূমি ও ভূমিসংস্কার দপ্তরের মাধ্যমে জমি হস্তান্তর হবে। তার জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে কলেজ কর্তৃপক্ষকে আবেদন করতে হত। তিনি বলেন, আগেই জমি হস্তান্তর হওয়া উচিত ছিল। ইতিমধ্যেই কলেজের পক্ষ থেকে আমার কাছে আবেদন জমা পড়েছে। তার ভিত্তিতে জমি হস্তান্তরের জন্য আইন অনুসারে যা যা করা প্রযোজন সেসব কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। জিটিএর চেয়ারম্যান অনীত থাপা বলেন, বিমল গুরুংয়ের আমলে ভুল হয়েছিল। সমস্যা মিটিয়ে যাতে সুষ্ঠুভাবে কলেজ পরিচালন সম্ভব হয় তার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আশা করছি জমির সমস্যা দ্রুত মিটিযে ফেলা সম্ভব হবে।