বালুরঘাট: টানা ১২ বছর ধরে খাঁচায় বন্দি থাকার পর অবশেষে মুক্তির স্বাদ পেতে চলেছে রানি। রানি আপাত নিরীহ স্বভাবের একটি বাঁদর। এখনও পর্যন্ত যার ঠিকানা বালুরঘাটের (Balurghat) শিশু উদ্যানের একটি ছোট খাঁচা। বন্দি অবস্থায় শহরবাসীর কাছে মনোরঞ্জনের বিষয় ছিল রানি। এবার অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশে রেহাই পাবে সেই বাঁদর। এমনকি তার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। বালুরঘাটের পশুপ্রেমী ব্রতিন চক্রবর্তীর অভিযোগের ভিত্তিতেই এমন নির্দেশ এসে পৌঁছেছে বন দপ্তরের কাছে।
পশুদের প্রশিক্ষণ দিয়ে খেলা দেখানো বহুদিন আগেই আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি বিনোদনের উদ্দেশ্যেও তাদের খাঁচায় বন্দি করে রাখা যাবে না বলে নির্দেশ রয়েছে। প্রতিটি পশুর উন্মুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠার অধিকার রয়েছে। যদিও চিড়িয়াখানার আইন অনুযায়ী সেখানে অন্য ব্যবস্থা রয়েছে। এদিকে বন দপ্তরের আওতায় থাকা বালুরঘাটের শিশু উদ্যানে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে খাঁচায় বন্দি ছিল রানি নামের এই বাঁদরটি। যেখানে কর্তৃপক্ষের তরফে তার দেখভালের জন্য লোকও রাখা হয়েছিল। তার চিকিৎসা থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া সবকিছুতেই নজর ছিল বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু খাঁচায় তার একা রাখা আইন বিরুদ্ধ। এই বিষয়টি নজরে আসে পশুপ্রেমী ব্রতীনবাবুর। তিনি সাংসদ মানেকা গান্ধির পিপল ফর অ্যানিম্যালস সংগঠনের জেলা সভাপতি।
আলিপুরদুয়ারের পশুপ্রেমী শংকর ধরের সঙ্গে তিনি বাঁদরটিকে খাঁচা থেকে মুক্ত করার আবেদন জানান। ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁকে চিঠি পাঠিয়েছেন। এমনকি সেই চিঠি এসে পৌঁছেছে বন দপ্তরের আধিকারিকের কাছেও। সেই চিঠিতে রানিকে দ্রুত মুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে খাঁচা থেকে মুক্ত করে রায়গঞ্জ কুলিক ফরেস্টে পুনর্বাসনের জন্য বলা হয়েছে। অন্যদিকে, এই বিষয়ে বন দপ্তরের রেঞ্জ অফিসার দ্রুত পদক্ষেপ করবেন বলে জানিয়েছেন।
ব্রতীন চক্রবর্তী বলেন, ‘মানুষের মতো বাঁদর সহ সকল পশুদের একাকীত্ব বোধ, দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা সহ সমস্ত অনুভূতি রয়েছে। তাদের খাঁচায় এভাবে বন্দি করে রাখা উচিত নয়। এটি আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’ আরেক অভিযোগকারী পশুপ্রেমী শংকর ধর বলেন, ‘অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের মতো বাঁদরকেও ভারতের পিসিএ আইন ১৯৬০-এর অধীনে বিনোদনের উদ্দেশ্যে রাখা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় না। কিন্তু ওই পার্কে আমোদ প্রেমীদের জন্য তাকে রেখে দেওয়া হয়েছিল। রানিকে মুক্ত করার নির্দেশে আমরা খুশি।’ বালুরঘাটের রেঞ্জ অফিসার সমীর সিকদার জানান, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শিশু উদ্যানের বাঁদরটিকে মুক্ত করার নির্দেশ এসেছে। আমরা দু-একদিনের মধ্যেই তাকে খাঁচা থেকে মুক্ত করে দেব।’
আরও পড়ুন: Daman Murmu | প্রয়াত হলেন আদিবাসী কাঠপুতুলের সৃষ্টিকর্তা দমন মুর্মু