রায়গঞ্জ: কর্ণজোড়ায় শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে মোটর কালীপুজো। বাৎসরিক পুজোর দিন নতুন গাড়ি নিয়ে ভক্তরা এখানে পুজো দিতে আসেন। প্রধান পুরোহিত ছাড়াও আরও প্রায় শ’খানেক পুরোহিত মিলে মায়ের পুজো সম্পন্ন করেন। পুজোকে ঘিরে বিরাট এলাকাজুড়ে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ভিন রাজ্য থেকেও অনেকে এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন।
রায়গঞ্জ শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে ১,৩৫৯ বঙ্গাব্দে মোটর কালী মন্দির স্থাপিত হয়। কথিত আছে পঞ্চাশ দশকের রায়গঞ্জ বালুরঘাট রাজ্য সড়কের ওই জায়গাটি অত্যান্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, মোটর কালী মায়ের মহিমা এতটাই তীব্র যে দ্রুত গতিতে ছুটে চলা যানবাহন মুহূর্তের জন্য হলেও এখানে থমকে যায়। বাৎসরিক এই পুজো হয় চৈত্র মাসের শেষ শনিবার। এক-দুদিন আগে থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এখানে পুজো দিতে আসেন। উত্তর দিনাজপুরের বেশ কিছু পুরোনো মন্দিরের মধ্যে কর্ণজোড়া মোটর কালীবাড়ি মন্দিরটি অন্যতম। ২৪ ঘন্টা দরজা খোলা থাকে দর্শনার্থীদের জন্য। সারা বছর ধরে পুজো হয়।
বালুরঘাট-রায়গঞ্জ যাওয়ার পথে কর্ণজোড়া এলাকায় ১০ এ রাজ্য সড়কের ধারে এই কালী মন্দিরের পুজোকে ঘিরে উন্মাদনা উত্তর দিনাজপুর ছাপিয়ে গিয়েছে। ১৯৩৫ সালে মাটি খুঁড়তে গিয়ে সিঁদুর তেল মাখা একটি ঘটের হদিস মিলেছিল। তারপর থেকেই এখানে পুজোর প্রচলন শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দা মোহনলাল। জানা গিয়েছে, মোহনলালই প্রথম পুজো শুরু করেন রায়গঞ্জ ঘেষা ১৩ নম্বর কমলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্ণজোড়া কালিবাড়ি এলাকায়। তাঁর মৃত্যুর পর রঞ্জিত সাধু নামে এক পুরোহিত পুজোর দায়িত্ব পান। রঞ্জিত সাধুর মৃত্যুর পর বৈষ্ণব মতে ওই কালীপুজোর সূচনা করেছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বর্তমানে ওই পুজো সামলাচ্ছেন অসীম চট্টোপাধ্যায় ও রিন্টু চট্টোপাধ্যায়। পুরোহিত অসীম চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রথমে বেড়ার মন্দির ছিল, পরবর্তীতে মাটির মন্দির হয়। এরপর ৩৫ বছর আগে মাটির মন্দির থেকে কংক্রিটের মন্দির তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘এই কালীর নাম মোটর কালী হলেও আদতে এটি দক্ষিণাকালী। এই মন্দিরে বলির রেওয়াজ রয়েছে। প্রতি অমাবস্যায় মহা ষাড়ম্বরে পুজো হয়।’ মোটর কালীর নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই মন্দির থেকে দুই কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জের এক ব্যবসায়ীর পেপার মিলের ফ্যাক্টরি ছিল। ফ্যাক্টরি থাকার দরুন সে সময় প্রচুর লরির যাতায়াত ছিল এই রাস্তায়। কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে কোন গাড়ি যেতে বা আসতে গেলে দুর্ঘটনা বা মন্দিরের সামনে বিকল হয়ে যেত। গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিপাকে পড়তে হত চালকদের। কথিত আছে চালকরা ওই মন্দিরে পুজো দিলেই নাকি নিজেই ঠিক হয়ে যেত গাড়ি। সেই থেকে নাম হয় মোটর কালী।