মিঠুন হালদার, ফরাক্কা: রাজ্য প্রশাসনের তরফে মালদা জেলাকে ‘অরেঞ্জ জোন’ ঘোষণা করার পর জেলায় ঢোকার আগে আটকে দিল মালদা জেলা পুলিশ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নিজের রুজি রুটির জন্য কাজে যাওয়া মুর্শিদাবাদের ওই শ্রমিকরা আটকে পড়লেন উত্তরবঙ্গে যাওয়া সীমান্তের কাছে।
মুর্শিদাবাদের ফরাক্কাতে প্রায় ১০০ জন শ্রমিকের ঠিকানা এখন ৩৪নং জাতীয় সড়ক এবং পুলিশের রিলিফ ক্যাম্প। যদিও বা তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শ্রমিক যাদের বাড়ি মালদা জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে মুর্শিদাবাদ জেলা এবং মালদা জেলার প্রশাসন।
আরও পড়ুন: অসুস্থ হয়ে মুম্বইয়ের হাসপাতালে ভর্তি ইরফান
এই বিষয়ে আটকে থাকা এক শ্রমিক কার্ত্তিক দাস বলেন, ‘চলতি বছরের ফ্রেবরুয়ারী মাসে আমরা শাড়ি তৈরির কাজের জন্য প্রায় ১৪ জন কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ থেকে নদীয়ার ফুলিয়াতে গিয়েছিলাম। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে গোটা দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে আমাদের সেই সমস্ত শাড়ি তৈরির কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা। সেখানে না ছিল খাবার, না ছিল কোনও থাকার ব্যবস্থা। অবশেষে নিজেদের মোবাইল ফোন সেখানকার কিছু মানুষের কাছে বিক্রি করে আমরা পুরানো সাইকেল কিনে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিই।’
আরও পড়ুন: জার্মানিতে নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ ডাক্তারদের
তিনি আরও বলেন, ‘গত দু’দিন আগে ফুলিয়া থেকে সাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। কিন্তু মালদা জেলার ঢোকার আগে ঠিক ফারাক্কা ব্রিজ পার হওয়ার সময়ে আমাদের মালদা জেলার পুলিশ আটক দেয়। বর্তমানে কেউ রাস্তায়, কেউ আবার সরকারি রিলিফ ক্যাম্পে দিন কাটাচ্ছি। প্রশাসন কোনওভাবে আমাদের কোনওরকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।’
একই কথা বলেন পুর্নিয়া জেলার এক শ্রমিক গোলাম জিহানী এবং তার চার সঙ্গী। তাঁরা বলেন, ‘দুর্গাপুরে কাজের জন্য ছিলাম। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার জন্য সাইকেল নিয়ে আসছি। কিন্তু মালদা জেলার পুলিশ আমাদের কোনওভাবে আর যেতে দিচ্ছেনা।’
একই কথাই বলেন সেখানে আটকে থাকা আর এক শ্রমিক মালদা জেলার চাঁচলের জয়ন্ত মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘যেখানে আমরা আটকে আছি সেখান থেকে বাড়ি আর হয়তো ৪০ কিলোমিটার দূরে। আমরা কলকাতার কাছে বাবুবাজার নামে একটি এলাকায় কাপড় তৈরির কারখানায় কাজ করতাম। কিন্তু এই লকডাউনের কারণে সেখানে সব কিছু বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে প্রশাসন আমাদের আটকে দিয়েছে। আমরা প্রসাশনকে বলেছিলাম বাড়িতে ফিরে ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে থাকব। সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের দেওয়া কাগজও আমাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন আমাদের আটকে দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: সাংসদ অর্পিতা ঘোষের সাহায্য পেয়ে আপ্লুত মুংলি
জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের তরফে তাঁদের ‘পথের সাথি’তে থাকার এবং খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বিষয়ে জঙ্গিপুর পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘রাস্তায় আটকে পড়া শ্রমিকদের সরকারি রিলিফ ক্যাম্পে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মালদা জেলার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বাকিদের মধ্যে প্রায় ৫৫ জনকে এখনও পাঠানো যায়নি।’