রায়গঞ্জ: রক্তের সম্পর্ক নেই, দুজন ভিন্ন ধর্মের মানুষ। কিন্তু বন্ধুত্ব এতটাই নিবিড় যে মুসলিম বন্ধু তার একটা কিডনি দিয়ে হিন্দু বন্ধুর সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। রায়গঞ্জ ব্লকের বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কাচিমুহা গ্রামের ঘটনা। শুধুমাত্র আন্তরিকতার কারণে এবং বন্ধুকে রোগ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতেই নিজের কিডনি দিতে এগিয়ে এসেছেন। বড়ুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কাচিমুহা গ্রামের বাসিন্দা হাসলু মহম্মদ। কালিয়াগঞ্জ থানার কুনোর গ্রামের বাসিন্দা অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু। পঞ্চম শ্রেণী থেকে একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। আট বছর আগে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন হাসলু মহম্মদ। সেই সময় একটি বেসরকারী ঋণ সংস্থার ম্যানেজার পদে কাজ করতেন বন্ধু অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস। তার হাত ধরেই সেই বেসরকারি সংস্থায় ফিল্ড অফিসার পদে কাজ পান।
এক বছর আগে অচিন্ত্য বাবুর দুটো কিডনিই বিকল হয়ে যায়। রায়গঞ্জ ও মালদাতে ডায়ালিসিস চলতো। অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় বর্তমানে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসা চলছে। মাস দুয়েক আগেই চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন দ্রুত কিডনি না বদলালে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার নেবে। অসুস্থ অচিন্ত্য বাবুর স্ত্রীর রক্ত পরীক্ষা করা হলেও সেই রক্তের গ্রুপ মেলেনি। পরবর্তীতে বাল্যকালের বন্ধু হাসলু মহম্মদ এগিয়ে আসেন। মাসখানেক আগে সরকারি নিয়ম অনুসারে ফর্ম ফিলাপ করে হাসলু।
ডিআইবি ও রায়গঞ্জ থানার পুলিশ সমস্ত কিছু তদন্তের পর ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পাঠিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য ভবনে। সেখান থেকে সমস্ত রিপোর্ট চলে গিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনে। সরকারি যে সমস্ত নিয়ম ছিল সেই সমস্ত নিয়ম পূরণ হওয়ায় দ্রুত কলকাতায় গিয়ে বন্ধুকে কিডনি দান করবেন হাসলু মহম্মদ।
অচিন্ত্য বাবুর স্ত্রী রিতা বিশ্বাস(মাহাতো) বলেন, আমাদের আট বছরের ছেলে রয়েছে। স্বামীর পরিবারের কেউ নেই। এক বছর আগে স্বামীর দুটো কিডনি বিকল হয়ে যায়। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ ক্রমশ নিম্নমুখী। দ্রুত কিডনি পাল্টানোর জন্য চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছেন।’ হাসলু মহম্মদের স্ত্রী সানোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার দুই ছেলে রয়েছে। একজনের বয়স সাত বছর অপরজনের বয়স পাঁচ বছর। বিয়ের পর চরম আর্থিক অনটনে ভুগছিলাম। সেই সময় আমার স্বামীর বাল্যকালের বন্ধু একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি দিয়েছিল। চাকরি করার পাশাপাশি হাটে হাটে কাপড়ের ব্যবসা করে আমার স্বামী। নিজের বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য একটি কিডনি দেবে সেখানে আমাদের তো কিছু বলার নেই।’ হাসলু মহম্মদ বলেন, ‘বিপদের সময় যে বন্ধু আমাকে দেখেছিল। আমিও সেই বন্ধুর বিপদের সময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। এখানে কোনো শর্ত নেই, নেই টাকার লেনদেন।’ পুলিশ সুপার মহন্মদ সানা আকতার বলেন, ‘সমস্ত ভেরিফিকেশন হয়ে গিয়েছে। রিপোর্ট স্বাস্থ্য দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।’