নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: লকডাউন সত্ত্বেও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যেভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে কপালে ভাঁজ পড়েছে কেন্দ্রের। করোনা আক্রান্তদের ঢালাও চিকিত্সা দেওয়ার বদলে রোগের প্রকোপ অনুযায়ী রোগীদের আলাদা করে ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থায় চিকিত্সা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
নয়া পরিকল্পনায় হাসপাতাল পরিকাঠামোকে তিনটি পৃথক স্তরে ভাগ করা হয়েছে। উপসর্গহীন কিংবা যত্সামান্য লক্ষণ রয়েছে এমন করোনা আক্রান্ত অথবা করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন রোগীদের কোভিড কেয়ার সেন্টারে রেখে চিকিত্সা করা হবে। নিশ্চিতভাবে করোনা আক্রান্ত কিন্তু শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এমন রোগীদের চিকিত্সার জন্য পাঠানো হবে কোভিড হেলথ সেন্টারে। করোনার জন্য সংরক্ষিত ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে চিকিত্সা করা হবে মুমূর্ষু করোনা রোগীদের।
মঙ্গলবার করোনায় আক্রান্তদের চিকিত্সা সংক্রান্ত এক নির্দেশিকায় সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে এ কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। মন্ত্রকের এক আধিকারিকের বক্তব্য, কোন রোগীর জন্য কী সরঞ্জাম প্রয়োজন তা বিস্তারিতভাবে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। কোনও অঞ্চলের হস্টেল বা স্কুলকে অস্থায়ীভাবে কোভিড কেয়ার সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু কোভিড হেলথ সেন্টারে হাসপাতালের সব ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর সর্বোচ্চমানের চিকিত্সা দেওয়ার উপযুক্ত করে তৈরি রাখতে হবে কোভিড হাসপাতালকে।
কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে এই নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। কোভিড কেয়ার সেন্টার অস্থায়ী হিসেবে কাজ চালালেও কোভিড হেলথ সেন্টার এবং হাসপাতালে করোনা চিকিত্সার পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা থাকতে হবে বলে ওই আধিকারিক জানান। তাঁর কথায়, দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে সবচেয়ে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার কথা মাথায় রেখে করোনা রোগীদের চিকিত্সায় এমন স্তরবিন্যাস করা হয়েছে। আশা করা যায়, এই নয়া পরিকল্পনায় যাঁর যতটুকু প্রয়োজন তাঁকে ততটা চিকিত্সা দেওয়া সম্ভব হবে। রসদ ও শ্রমশক্তির সদ্ব্যবহার করা যাবে।
এদিকে বুধবার এক লাফে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে প্রায় ৮০০। আক্রান্তের সংখ্যাও ৫০০০ ছাড়িয়েছে। বুধবার শেষ ১২ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩১ জন। মঙ্গল ও বুধবার মিলিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭৭৩ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসাব বলছে, দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এদিন বেড়ে হয়েছে ৫,২৭৪। এঁদের মধ্যে ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪০২ জন। উদ্বেগ বেড়েছে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায়। ম ঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। মোট মৃতের সংখ্যা ১৪৯।
শুধু মহারাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে ৬৪ জনের। সংক্রমণের দিক থেকেও পাল্লাভারী উদ্ধব ঠাকরের রাজ্যের। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার পেরিয়েছে (১,০১৮)। মৃতের সংখ্যার নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাট। দুই রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জন করে। দিল্লিতে মারা গিয়েছে ৯ জন। এরপর তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা ও পঞ্জাব। তিনটি রাজ্যের প্রতিটিতে ৭ জন করে মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মৃতের সংখ্যা ৫, অন্ধ্রপ্রদেশে ৪।