গৌতম সরকার, মেখলিগঞ্জ, ১৫ এপ্রিলঃ দামি ফ্ল্যাট কিংবা দালানবাড়ি মোটেই তাঁদের পছন্দ নয়। নিয়মিত দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড়ের নিশ্চয়তা সবচেয়ে আগে দরকার। লোকসভা ভোটের মুখে এমনটাই বলছেন সবেন বর্মন, শৈব্যা রায়, বিনোদচন্দ্র বর্মনরা। তাঁদের কথায়, বছরতিনেক আগে অনেক স্বপ্ন নিয়ে দেশ বদল করে ভারতে এসেছিলেন। কিন্তু সেইসব স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কিনা সেটা তাঁরা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না। স্থায়ী কাজ নেই, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়ে উঠবে- এইসব নিয়ে ভীষণ চিন্তিত এবং খানিকটা হতাশ বলেও তাঁরা জানিয়েছেন।
মেখলিগঞ্জ সীমান্ত এলাকার নব্য ভারতীয়দের অনেকেরই বক্তব্য, স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চাইছেন তাঁরা। পছন্দের দেশে আসার পর থেকেই তাঁরা বিভিন্ন মহলে স্থায়ী কাজের আর্জি জানাচ্ছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। অনেকে আবার অভিযোগ করেন, এখানে আসার পর বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত- এই দুটি নির্বাচনে তাঁরা ভোট দিয়েছেন। এবার নতুন দেশের সরকার গঠনে প্রথম ভোট দেবেন। আগের দুটি নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্তাদের তরফেও এইসব নব্য ভারতীয়দের স্থায়ী কাজের দাবির বিষয়ে গুরুত্ব দেবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি, যা নিয়ে অনেকের মনেই ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে।
তাঁরা শুনেছেন, তাঁদের স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য চ্যাংরাবান্ধা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বহুতল বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু পেটের ভাত জোগাড়ের নিশ্চয়তা না থাকলে ওইসব দালানবাড়ি খিদে মেটাতে পারবে না, বলছেন তাঁরা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমল দেওয়া হচ্ছে না বলে তাঁদের অভিযোগ। লোকসভা ভোটের মুখে স্থায়ী কাজের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন মেখলিগঞ্জ ব্লকের ভোটবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া সাবেক ছিটমহলবাসীরা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অস্থায়ী শিবিরে ৪৮টি পরিবার রয়েছে। ছিটমহল বিনিময় চুক্তির আগে এইসব পরিবার বাংলাদেশের ভিতরে লোথামারি, বাঁশকাটা, হাতিবান্ধা প্রভৃতি ভারতীয় ছিটমহলে বসবাস করত। ছিটমহল বিনিময় চুক্তিতে তাঁরা পছন্দের দেশ হিসেবে ভারতকে বেঁছে নিয়ে পাকাপাকিভাবে এখানে চলে এসেছে। তাঁদের অনেকের অভিযোগ, ওইসময় তাঁদের নানা ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তাঁদের নানা প্রকার সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।
সবচাইতে বেশি চিন্তায় পড়েছেন স্থায়ী কাজের বিষয়টি নিয়ে। তাঁদের একাংশ বলেন, প্রশাসনের তরফে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে, এই আশায় অপেক্ষা করতে করতে অনেকেরই সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। কারণ প্রশাসনের তরফে তাঁদের জন্য যে র্যাশন ব্যবস্থা চালু রয়েছে, সেটা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। তার উপর তাঁদের সংসারের নানা খরচ রয়েছে। যেগুলি জোগাড় করতে গিয়ে অনেকের দিশেহারা অবস্থা। নতুন দেশে সহজে কাজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে তাঁদের অধিকাংশই দিনমজুরি করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। কেউ টোটো চালান, কেউ আবার অন্যের দোকানে কাজ করছেন।
এবারও ভোট চাইতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এখানে আসছেন। ফের আশ্বাসও দিচ্ছেন। কিন্তু আর তাঁরা ভরসা পাচ্ছেন না বলে নব্য ভারতীয়দের অনেকেই জানান। যদিও এ বিষযে এই সময় কোনো মন্তব্য করতে চাননি মেখলিগঞ্জ ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। তবে তাঁদের দাবির বিষয়ে ইতিপূর্বেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে ওই দপ্তর সূত্রে খবর।