রায়গঞ্জ : হুইলচেয়ার এবং ট্রলি না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীর আত্মীয়দের। ট্রলি না মেলায় কোলে বা কাঁধে চাপিয়ে রোগীদের এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে হচ্ছে। বেশি সমস্যা হচ্ছে শারীরিকভাবে অক্ষম রোগীর আত্মীয়পরিজনদের। ট্রলি বা হুইলচেয়ার না থাকার কারণে তাঁরা বিপাকে পড়ছেন।
রবিবার এমনই দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয় রায়গঞ্জের গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের অমৃতখণ্ডের এক রোগীর আত্মীয়দের। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করার পরেও ট্রলি না মেলায় দুর্ঘটনায় জখম ওই রোগীকে কোলে চাপিয়ে ছয়তলায় উঠতে হয়। যদিও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ এখনও মেলেনি। রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপকুমার পাল বলেন, এখনও পর্যন্ত ওই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রায়গঞ্জের গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের অমৃতখণ্ডের বাসিন্দা ভূষণ দাস শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি বাজার থেকে সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাইকেল থেকে পড়ে যান তিনি। চোট লাগে তাঁর ডান পা, কোমর এবং বাম হাতে। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান। যন্ত্রণায় ভূষণবাবু হাঁটতে পারছিলেন না। ফলে তাঁকে গাড়িতে বসিয়ে রেখেই হুইলচেয়ারের খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ ধরে চেষ্টা করার পরেও হুইলচেয়ার না মেলায় কোলে চাপিয়ে তাঁকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান বাড়ির লোকেরা।
জখম ভূষণের ভাই প্রদীপ দাস বলেন, প্রায় পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট ধরে হাসপাতালে ছোটাছুটি করে একটি হুইলচেয়ার জোগাড় করতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত দাদাকে কোলে করে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। এরপর চিকিৎসকেরা তাঁকে ছয়তলায় পুরুষ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তির পরামর্শ দেন। সমস্যা হয় তখনই। কোনও ট্রলি না মেলায় কোলে চাপিয়ে দাদাকে নিয়ে ছয়তলায় উঠতে হয়। মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কোনও হুইলচেয়ার বা ট্রলি না থাকার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রদীপবাবু।
২০১৮ সালের নভেম্বরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে উন্নীত করে রাজ্য সরকার। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অক্ষম রোগীদের জরুরি বিভাগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য কুড়িটি হুইলচেয়ার ও ৪০ টি নতুন ট্রলি কেনে। অভিযোগ, গত এক বছরে ধীরে ধীরে হাসপাতালে বেশিরভাগ হুইলচেয়ার ও ট্রলি ভেঙে গিয়েছে। ফলে প্রায় এক মাস ধরেই হুইলচেয়ার ও ট্রলির অভাবে রোগীদের জরুরি বিভাগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন তাঁদের পরিবারের লোকেরা। এই পরিস্থিতিতে মাঝেমধ্যেই রোগীকে কোলে করেই জরুরি বিভাগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দশ তলার ওই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড মিলিয়ে প্রায় ৪৫০টি শয্যা রয়েছে। হাসপাতালের তিনতলায় পুরুষ মেডিসিন, চারতলায় মহিলা মেডিসিন, পাঁচতলায় ইএনটি, ছয়তলায় পুরুষ ও মহিলা সার্জিক্যাল এবং অর্থোপেডিক ও সাততলায় প্রসূতি ওয়ার্ড রয়েছে। রোগীর আত্মীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে জরুরি বিভাগের বাইরে একাধিক ভাঙা হুইলচেয়ার পড়ে রয়েছে। কিন্তু রোগীদের জরুরি বিভাগ বা ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেগুলি মেরামত করছেন না।