শুভদীপ শর্মা, লাটাগুড়ি : ঘরে চরম অনটন। সংসার চালাতে হিমসিম খান তাঁরা। তা সত্ত্বেও বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নজির গড়লেন লাটাগুড়ির দুই বন্ধু। দিন আনা দিন খাওযা অবস্থা সত্ত্বেও পকেটের টাকা খরচ করে বাইকের পেট্রোল কিনে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি থেকে ময়নাগুড়ি ছুটে যাচ্ছেন তাঁরা। কারণ একটাই। লকডাউনের কারণে ঘরবন্দি মানুষকে ওষুধ পৌঁছে দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের একজন সিভিক ভলান্টিয়ার ও অন্যজন বেসরকারি সংস্থার কর্মী। লাটাগুড়ির দুই বন্ধু নুর ইসলাম ও শ্যামল মহন্তের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বহু মানুষ।
লাটাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব লাটাগুড়ির বাসিন্দা নুর ইসলাম। তিনি পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁর বাবা মহম্মদ আলি পেশায় ছোট ঠিকাদার। রাস্তার বিভিন্ন কাজে তিনি শ্রমিকের জোগান দেন। শ্যামলের বাবা গোবিন্দ মহন্ত দিনমজুরের কাজ করেন। দুজনের সংসারেই নিত্যদিনের অভাব। তা সত্ত্বেও দুর্দিনে অসহায় মানুষের অত্যাবশ্যক ওষুধের জোগান দিতে ময়দানে নেমেছেন তাঁরা। নুর বলেন, লকডাউন শুরু হওযার পরই লাটাগুড়ি স্টেশনপাড়ার মিষ্টির দোকানের কারিগর কর্ণ দাসের স্ত্রী সন্ধ্যা দাস তাঁদের ছেলে দীপ দাসের জন্য নার্ভের ওষুধ এনে দেওয়ার অনুরোধ জানান। তখন আমরা ওষুধ এনে দিই। তারপর থেকেই অনেকে অনুরোধ করছেন। এই বিপদে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পেরে ভালো লাগছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, নুর সেই আবদারে সাড়া দিয়ে গোটা লাটাগুড়ি খুঁজেও সেই ওষুধ পাননি। বাইরে কোথাও যে ওষুধের খোঁজ করবেন, তারজন্য তাঁর নিজস্ব মোটর সাইকেলও ছিল না। বিকেলে তিনি তাঁর বন্ধু শ্যামলকে সমস্ত বিষয়টি জানান। শ্যামল তাঁর বাইক দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন। তারপর দিনই ওষুধের খোঁজে মালবাজার রওনা হন ওই দুই বন্ধু। মালবাজারে ওষুধ না পেয়ে শিলিগুড়ি থেকে ওষুধ এনে দেন ওই পরিবারের হাতে। ওই দুই বন্ধু শিলিগুড়ি যাওযার পেট্রোল পর্যন্ত নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে ভর্তি করেন। এই বিষয়টি লোকমুখে লাটাগুড়িতে ছড়িয়ে যায়। তারপর থেকেই তাঁদের দুজনের কাছে একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে। আর ফোন পেয়ে ওষুধের খোঁজে কখনও ময়নাগুড়ি আবার কখনও জলপাইগুড়ি ছুটছেন ওই দুই যুবক। এখনও পর্যন্ত বহু প্রযোজনীয় ওষুধ তাঁরা বহু মানুষের হাতে পৌঁছে দিয়েছেন।
লাটাগুড়ির স্থানীয় বাসিন্দা তথা মাল পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, সত্যি ওই দুই যুবক প্রশংসার দাবি রাখেন। তাঁদের কাজে আমরা সবরকমভাবে সহযোগিতা করব। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এই চরম ভয়ংকর দিনে ওই দুই যুবক না থাকলে, অনেককে ওষুধের জন্য হাহাকার করতে হত। অনেকেই জীবনদায়ী ওষুধ পেতেন না। তাই এই দুই যুবকের ঋণ ভোলার নয়।