রেজাউল হক, পুরাতন মালদা : একেই লকডাউনের জেরে অসহায় পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন দিনমজুর বৃদ্ধ দম্পতি। তার ওপর সকালে ঝড়বৃষ্টিতে কাঁচাবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে পুরাতন মালদা থানার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোহরপুর গ্রামের অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি। বুধবার সকাল থেকে একটানা ঝড়বৃষ্টির জেরে ওই বৃদ্ধ দম্পতির চাটাই ও টালির বাড়ি ভেঙে পড়ে যায়। অল্পের জন্য তাঁরা প্রাণে বাঁচলেও এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। প্রবল ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ভেজা গাযে ভেঙে যাওয়া বাড়ির পাশেই কোনওরকমে নিজেদের প্রাণ বাঁচান বৃদ্ধ ধীরেন্দ্রনাথ বর্মন (৭২) ও পূর্ণিমা বর্মন (৬৫)।
ওই বৃদ্ধ দম্পতির অসহায়তার কথা জানতে পেরে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন পুরাতন মালদা ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি সুদর্শন হালদার। সকাল থেকেই ঝড়বৃষ্টিতে দুর্বিষহ অবস্থায় থাকা অভুক্ত ওই দম্পতির হাতে চাল, ডাল,আলু ও সামান্য কিছু আর্থিক সাহায্য তুলে দেন সুদর্শনবাবু। সহযোগিতা পেয়ে আশ্রয়হীন হলেও পেটের জ্বালা মিটিয়েছেন তাঁরা।
মনোহরপুর গ্রামের রাস্তার ধারে একচিলতে চাটাই ও টালির ঘরে থাকতেন দিনমজুর বৃদ্ধ ধীরেন্দ্রনাথ বর্মন এবং তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা বর্মন। দুজনের পরিবারে কোনওরকমে দিন কেটে যাচ্ছিল। লকডাউনের মধ্যে খাবারের টানও দেখা দিয়েছিল। কিন্তু বুধবার সকালে প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে তাঁদের বাড়িটি ভেঙে পড়ে যায়। সেই সময় পূর্ণিমাদেবী রান্নাঘরে ছিলেন। ধীরেন্দ্রনাথবাবু ছিলেন নিজের শোওয়ার ঘরে। অল্পের জন্য দুজনেই প্রাণে বেঁচেছেন। আশ্রয়হীন হযে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা। ধীরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, দিনমজুরি করে সংসার চালাতাম। কিন্তু এখন বয়সের ভারে তেমন কাজ করতে পারি না। লকডাউনের জন্য বাড়ি থেকে বেরোতে পারছি না। স্বামী-স্ত্রী দুজনে বাড়িতে রয়েছি। কিন্তু ঝড়ে ঘর ভেঙে পড়েছে। এখন কোথায় আশ্রয় নেব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। পঞ্চায়েতের কাছেও সহযোগিতা চেয়েছি।
এদিকে পুরাতন মালদা ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি সুদর্শন হালদার বলেন, ওই বৃদ্ধ দম্পতির খবর পেয়ে মনোহরপুর গ্রামে যাই। তাঁদের হাতে যতটা পেরেছি খাদ্যসামগ্রী ও সামান্য কিছু আর্থিক অনুদান তুলে দিয়েছি। তাঁদের ভেঙে পড়া ঘরটি নতুন করে তৈরি করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হচ্ছে। পুরাতন মালদার বিডিও ইরফান হাবিব জানান, ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির কোনও রিপোর্ট এখনও নেই। তবে এই বৃদ্ধ দম্পতির ঘর ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৃণালিণী মণ্ডল মাইতি জানিয়েছেন, বুধবার সকাল থেকেই ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। তার জেরে কোথায় কী ক্ষতি হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। মুচিয়ার মনোহরপুর গ্রামে এক বৃদ্ধ দম্পতির বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় তাঁরা আশ্রয়হীন হযে রয়েছেন বলে শুনতে পেয়েছি। তাঁদের পঞ্চায়েত থেকে সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হবে।