সাজাহান আলি, পতিরাম : নিজের বলতে কেউ নেই। জীবনে অন্তত ৫০ বছর রিকশা চালিয়ে সংসার নির্বাহ করেছেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বয়সের ভারে সেই কাজ করতে পারেন না। বাড়িঘর নেই। তাই পরিত্যক্ত পার্টি অফিসেই আশ্রয় নিয়েছেন দ্বিজেন মহন্ত (৮০)। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ময়লা কাঁথায় দিন কাটছে এই বৃদ্ধর। কোনওদিন কেউ কিছু দিলে মুখে ওঠে। নয়তো অনাহারে থাকতে হয়। বার্ধক্য ভাতা বাবদ স্থানীয় একটি ব্যাংকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা জমা রয়েছে। কিন্তু ভোটার কার্ড, আধার কার্ড হারিয়ে যাওয়ায় দুই বছর ধরে বার্ধক্য ভাতার টাকাও তুলতে পারছেন না দ্বিজেনবাবু। জীবনের প্রান্তে উপস্থিত হয়ে তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কাছে করজোড়ে প্রার্থনা করেছেন, বেঁচে থাকার জন্য ব্যাংক থেকে অন্তত বার্ধক্য ভাতার টাকাটা তুলতে দেওয়া হোক।
দ্বিজেন মহন্তর আদি বাড়ি ছিল লক্ষ্মীপুরের কাছে মণিপুর গ্রামে। লক্ষ্মীপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল, ছোট্ট টিনের কুটিরে ময়লা বিছানা কাঁথায় মশারি টাঙিয়ে বসে রয়েছেন তিনি। কথা বলার ক্ষমতাও খুব কম। বহু কষ্টে জানালেন, এক ছেলে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছে কয়েক বছর আগে। সে কোনও খোঁজ রাখে না। কোথায় আছে তাও জানা নেই। একমাত্র মেয়ে বহু বছর আগে শিলিগুড়িতে বিয়ে হয়েছে। তার সঙ্গেও যোগাযোগ নেই। মণিপুর গ্রামে নিজের একটা কুঁড়েঘর ছিল। তাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে বছর দশেক আগে। সব হারিয়ে এখন ভাঙা পার্টি অফিসই তাঁর ঠিকানা। স্থানীয়দের দেওয়া খাবারেই চলে তাঁর জীবন। ইদানীং করোনা ও লকডাউনে তাও ঠিকমতো জুটছে না। করোনার ভয়ে অনেকে আর বৃদ্ধের কাছাকাছি আসতে চান না। যদিও কিছু মানুষ সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন পতিরাম নাগরিক ও যুব সমাজের তরফে দ্বিজেনবাবুকে গত কয়েদিন ধরে দুপুরবেলায় রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। দ্বিজেনবাবু জানান, সরকারের তরফে দেওয়া বার্ধক্য ভাতার ২৫০০০ টাকা তাঁর পতিরাম বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাংকের শাখায় জমা রয়েছে। কিন্তু ভোটার কার্ড, র্যাশন কার্ড বা আধার কার্ড না থাকায় সেই টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে পারছেন না।
এই অবস্থায় পতিরাম গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সাজ্জাক মণ্ডল জানান, ব্যাংক থেকে ভাতার টাকা পেলে থাকার চৌকি ও অন্য আসবাব কেনা যেত। তাছাড়া ওই টাকায় তাঁর দু’বেলার অন্নসংস্থানও হয়ে যেত। কিন্তু ব্যাংক প্রমাণপত্র ছাড়া টাকা দিতে রাজি নয়। বিষয়টি নিয়ে খুব শীঘ্রই বিডিও, জেলাশাসক সহ প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব।