Thursday, March 28, 2024
HomeMust-Read Newsআনন্দের রং যেখানে মলিন, পুজোর দিনে মায়ের স্পর্শের খোঁজ হৃদয়-দেবজিৎদের

আনন্দের রং যেখানে মলিন, পুজোর দিনে মায়ের স্পর্শের খোঁজ হৃদয়-দেবজিৎদের

বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: ওদের কারও মা নেই, কারও বা বাবা। কারও আবার বাবা মা দুজনের কেউ নেই অর্থাৎ অনাথ। পুজো আসে, সেজে ওঠে পাড়া, মহল্লা, গ্রাম। মা দুর্গা আসেন কিন্তু আসে না ওদের মা অথবা বাবা। পুজোর দিনেও ওদের জগৎ বলতে সেই শিশু সদনের চার দেওয়ালের ঘেরাটোপ। আর পাঁচটা দিনের মতই শিশু মনের চঞ্চলতা, উচ্ছলতা খুঁজে ফেরে মায়ের স্পর্শ, মায়ের আঁচলের গন্ধ।

বছর দুয়েক আগে মা-বাবা এক সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করার পর থেকেই হৃদয় বর্মনের ঠাঁই হয়েছে রায়গঞ্জ দেবীনগর এলাকায় অবস্থিত শিশু সদন আবাসনে। নিঃসঙ্গ জীবন। মাঝেমধ্যে হৃদয়ের কাকা খোঁজখবর নিতে শিশু সদনের আবাসনে আসেন। হৃদয়ের বাড়ী রায়গঞ্জ থানার মহারাজায়। সে পড়াশোনা করে দেবীনগর গয়ালাল স্কুলের নবম শ্রেণীতে। সহপাঠী বন্ধুরা যখন শারদ উৎসবের আনন্দে গা ভাসিয়েছে তখন হৃদয় এদিন এই প্রতিবেদককে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। সাত বছরের দেবজিৎ চন্দ্র। বছর চারেক আগে দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই তার মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। দেবজিতের বাড়ি রায়গঞ্জ শহরের সুদর্শনপুর এলাকায়। দেবজিৎ স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। একবছর আগে তার পিসি এসে তাকে ওই শিশু সদনে ভর্তি করে গিয়েছেন। দেবীনগর শিশু শিক্ষা নিকেতনের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ফ্রান্সিস বেসরা। বাড়ি রায়গঞ্জ থানার বিন্দোল গ্রামে। বাবা মারা যান চার বছর আগে। গত বছর মারা যান মা। একসময় পিসি সালমা বেসরা এসে খোঁজ নিতেন। এখন অবশ্য পিসির সেই সময় নেই। এক রত্তি ছেলের আক্ষেপ আগে তো পিসি খোঁজ নিত। এখন আমার কেউ খোঁজ নেয় না। রায়গঞ্জ শহরের গোয়ালপাড়ায় বাড়ি দেব বর্মনের। বাবা মারা যাওয়ার পর মা অন্য পুরুষকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লি পাড়ি দেন। এই অনাথ শিশুর ঠিকানা এখন শিশু সদন। রায়গঞ্জের মহকুমা শাসক কিংশুক মাইতির উপস্থিতিতে তাদের হাতে জামা কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।

সঙ্গে ছিলেন শিশু সদনের সুপারিনটেনডেন্ট সাধন সিংহ রায়। ১৫০ জন আবাসিককে পুজোয় নতুন জামাকাপড় জুতো দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রত্যেককে অষ্টমী পুজো পরিক্রমাও করানো হয়। মেনুতে ছিল, ছোলার ডাল নারকেল দিয়ে আলু পোস্ত, ফুলকপির তরকারি। নবমীর দিন দেওয়া হবে মুরগির মাংস। দশমীর দিন খাসির মাংস ও পোলাও। শিশু সদন কর্তৃপক্ষের চেষ্টার অন্ত নেই। কিন্তু তার মধ্যেও ওদের ভাবনায় শুধু মা। যদি নতুন মা পাওয়া যেত। অথবা পুরনো মা নতুন করে ফিরে আসত। তাই নতুন জামাকাপড় এদের কাছে মলিন, ফ্যাকাশে, বেরং।

Sabyasachi Bhattacharya
Sabyasachi Bhattacharyahttps://uttarbangasambad.com/
Sabbyasachi Bhattacharjee Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 23 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img
[td_block_21 custom_title="LATEST POSTS"]

Most Popular