আলিপুরদুয়ার ব্যুরো : করোনার থাবায় ডুয়ার্সের হোমস্টের মালিকরা তীব্র আর্থিক বিপর্যয়ে মধ্যে পড়েছেন। লকডাউনের জেরে এখন সব যানবাহন বন্ধ। যে সব পর্যটক আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন জায়গায় এসেছিলেন, তাঁরাও ফিরে গিয়েছেন। এই অবস্থায় হোমস্টে ব্যবসা লাটে উঠতে বসেছে বলে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন। তাই অনেক হোমস্টের মালিক দাবি করেছেন যে, আগামী পুজোতে জঙ্গল খোলা রাখতে হবে। যাতে পর্যটকরা আসতে পারেন। এতে লকডাউনের জন্য ব্যবসার যা ক্ষতি হচ্ছে তা অনেকটা পূরণ করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে আলিপুরদুয়ারের পর্যটন দপ্তরের আধিকারিক কমলিকা মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা হোমস্টে তৈরির জন্য সাহায্য করি। কিন্তু ব্যবসায়িক দিকটি মালিককেই দেখতে হয়। তবে করোনার জন্য হোমস্টে ব্যবসার ক্ষতির বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।
আলিপুরদুয়ার জেলার কোদালবস্তি, মেন্দাবাড়ি, পুরানো হাসিমারা, চিলাপাতা, রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তি, বক্সা পাহাড়ে রয়েছে শতাধিক হোমস্টে। এর মধ্যে বেশ কিছু ব্লু হোমস্টেও রয়েছে। লকডাউন শুরুর আগে থেকেই অজানা আতঙ্কে পর্যটকরা হোমস্টের আগাম বুকিং বাতিল করেছেন। বুকিং বাতিলের জেরে শুধু হোমস্টের মালিকরাই সমস্যায় পড়েননি। হোমস্টের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কার সাফারির ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়েছেন। এছাড়াও টুরিস্ট গাইড থেকে শুরু করে আদিবাসী লোকনৃত্যের শিল্পীদেরও রুজিরোজগার আপাতত বন্ধ রয়েছে। তাই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা লকডাউন উঠলেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কোদালবস্তি বনবস্তির একটি ব্লু হোমস্টের মালিক মনেশ্বর রাভা বলেন, করোনা ভাইরাস আমাদের ব্যবসায় মারাত্মক ক্ষতি করে দিয়েছে। পর্যটক না থাকায় হোমস্টে সংলগ্ন এলাকাগুলি খাঁখাঁ করছে। অপর হোমস্টের মালিক শ্যামল রাভাও একই অভিযোগ তুলেছেন। পরিস্থিতি এমন য়ে তাঁরা হোমস্টের কর্মচারীদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারছেন না।
উমাচরণপুরের ব্লু হোমস্টের মালিক শম্ভু সুব্বা বলেন, ব্যাংকঋণ নিয়ে বাড়িতেই চারটি রুম তৈরি করেছিলাম। করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে চরম সমস্যায় পড়েছি। মাদারিহাট ত্রিনয়নী হোমস্টের মালিক গোপাল দে বলেন, ব্যাংকঋণ দিয়ে পাঁচটি রুম তৈরি করেছি। এখন কর্মীদের বেতন দিতে পারছি না। এর উপর ব্যাংকের মাসিক কিস্তি দেওয়া নিয়ে চরম সমস্যায় পড়েছি।
খাউচাঁদপাড়ার ব্লু হোমস্টের মালিক গণেশ সুব্বা বলেন, করোনার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়ে গেল। কর্মীদের বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। ব্যাংকের মাসিক কিস্তি দিতে হচ্ছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলা মুশকিল। ততদিনে এই হোমস্টে বাঁচিয়ে রাখতে পারব কি না জানা নেই। তিনি জানান, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ঘিরেই তাঁদের ব্যবসা ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বন দপ্তরের কাছে আবেদন জানাবেন যে, যাতে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিনমাস জঙ্গল খোলা রাখা হয়। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, করোনার জন্য গোটা বিশ্ব আজ থমকে। ব্যতিক্রমী নয় আমাদের রাজ্যও। আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। তারপর বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা যাবে।