প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ সামাজিক পরিসরে ব্যতিক্রমী ও অনন্য অবদানের জন্য এ বছর একাধিক কৃতি বঙ্গ প্রতিনিধির হাতে দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান রূপে পদ্ম সম্মান (Padma Award ) তুলে দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও প্রধানমন্ত্রী দফতর সূত্রে প্রকাশিত প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী যে সমস্ত কৃতি বাঙালি-রা এবছর পদ্ম সম্মানে ভূষিত হতে চলেছে তাঁদের অন্যতম-প্রয়াত চিকিৎসক ড. দিলীপ মহালানবিশ, বর্ষীয়ান সারিন্দাবাদক মঙ্গলকান্তি রায়, চিকিৎসক রতনচন্দ্র কর, উত্তরবঙ্গের টোটো ভাষাবিদ ধনিরাম টোটো সহ আরও অনেকে।
এবছর মরণোত্তর পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হয়েছেন ‘ওআরএস’-র জনক প্রয়াত চিকিৎসক ড. দিলীপ মহালানবিশ। ১২ নভেম্বর ১৯৩৪ সালে বাংলাদেশে কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্ম দিলীপবাবু চিকিৎসার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বনগাঁ সীমান্তে কলেরায় আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষকে বাঁচানোর নেপথ্যে মূল ভূমিকা ছিল এই চিকিৎসকের। তাঁর উপস্থিত বুদ্ধিতেই স্যালাইন ওয়াটার সূচের মাধ্যমে ধমনীতে প্রবেশ করানোর বদলে পানীয়ের সাহায্যে খাওয়ানো শুরু হয়। নুন-চিনি-বেকিং সোডার জল দিয়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন দিলীপ, অথচ তখনও পর্যন্ত ওআরএসের প্রয়োগে স্বীকৃতিই দেয়নি বিশ্ব চিকিৎসার নিয়ামক সংস্থা। তবু ঝুঁকি নিয়েই কাজ করেছিলেন চিকিৎসক। পরে তাঁর হাত ধরে বিশ্বে স্বীকৃতি পায় ওআরএস। ১৬ অক্টোবর ২০২২ সালে ৮৮ বছর বয়সে নিঃশব্দেই প্রয়াত হন এই আপাত প্রচারবিমুখ মানুষটি। এবার তাঁকেই পদ্মবিভূষণে (মরণোত্তর) সম্মান জানাল কেন্দ্রীয় সরকার।
পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছেন আরেক কৃতি বাঙালি চিকিৎসক ড. রতনচন্দ্র কর৷ আন্দামান নিবাসী ৬৬ বর্ষীয় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক তাঁর জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়েছেন প্রাচিন ‘জারোয়া’ উপজাতিদের স্বাস্থ্য পরিচর্যায়। দক্ষিণে সেন্টিনেল আইল্যান্ডে বসবাসকারী হিংস্র জারোয়া উপজাতিদের চিকিৎসায় তিনি নিবেদিত প্রাণ। ১৯৯৯ সালে গুঁটি বসন্তের প্রকোপে যখন জারোয়া উপজাতি প্রায় নিঃশেষিত হতে বসেছিল, রতনবাবু প্রাণের তোয়াক্কা না করে, তাদের কাছে পৌছান ও সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করে তাদের বিলুপ্তির মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন। হিংস্র জারোয়াদের নিয়ে একাধিক গ্রন্থপ্রণেতা এই বাঙালি চিকিৎসকের হাতে পদ্মশ্রী প্রদান করতে চলেছে কেন্দ্র।
বাংলা ছাড়াও গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক ভাষা-উপভাষা। তাদের শব্দভাণ্ডার, ব্যাকরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন বাংলার থেকে। অথচ কোনো লিপি না থাকায় বাংলার হরফেই লেখা হয় এইসকল ভাষা। আজ থেকে কয়েকবছর আগে পর্যন্তও সেই তালিকাতে ছিল টোটো ভাষা। বছর ছয়েক আগে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র লিপি পায় এই উপজাতি ভাষাটি। যার নেপথ্যে রয়েছেন ৫৯ বছর বয়সি জলপাইগুড়ির টোটোপাড়ার ধানীরাম টোটো। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও, তিনি ইতিমধ্যেই লিখে ফেলেছেন দুটি উপন্যাস, ‘ধানুয়া টোটোর কথামালা’ এবং ‘ডুমরা থিরতে’। আখ্যান রচনার সময়ই, নিজের মাতৃভাষার বর্ণমালা তৈরির চিন্তাভাবনা দানা বাঁধতে শুরু করে তাঁর মনে। ফলস্বরূপ এখনো পর্যন্ত ৩৭ টি শব্দবর্ণ উদ্ভাবন করে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচান টোটো ভাষাকে। উত্তরবঙ্গের এই অখ্যাত ভাষাবিদকেই সরকার তুলে দিচ্ছে পদ্মশ্রী সম্মান।
জলপাইগুড়ি জেলার আরেক ভূমিপুত্র সারিন্দা সম্রাট মঙ্গলাকান্তি রায়কেও পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করেছে কেন্দ্র। সুপ্রাচীন বাদ্যযন্ত্র সারিন্দার মাধ্যমে পাখিদের সুর তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ১০২ বছর বয়সি পল্লিগীতি শিল্পী। সারিন্দা বাদ্যযন্ত্রকে সংরক্ষণ করতে গত ৮ দশক ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। এরই সঙ্গে সূচিশিল্প, বিশেষ করে হাতেবানানো কাঁথাস্টিচ কারিগরির জগতে অসামান্য অবদানের জন্য পদ্মশ্রী পেয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার সূচিশিল্পী প্রীতিকণা গোস্বামী।
লেটেস্ট খবর জানার জন্য দেখুন www.uttarbangasambad.com এবং ব্রেকিং নিউজ (Breaking News) এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন উত্তরবঙ্গ সংবাদ টিভিতে ।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Instagram পেজ ।