নয়াদিল্লি: ২১ জুন সংসদে বিরোধী দলীয় বৈঠকে যখন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহার নাম চূড়ান্ত করে ফেলেছেন ১৮ বিরোধী দলীয় প্রতিনিধিরা, পার্লামেন্টের রিসেপশনে তখন নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কাজিয়ায় মেতেছেন পাটনার শ্যামনন্দন প্রসাদ। বারবার করে জানাচ্ছেন আবেদন, আর তা বারবার খারিজ করছেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
শ্যামনন্দন প্রসাদের আর্জি শুনে অনেকেই চোখ কপালে তুলেছেন। কেন? শ্যামনন্দন বিরোধী বৈঠকে অংশ নিতে চান। তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন, স্বয়ং রাষ্ট্রপতি পদে অন্যতম প্রার্থী। তাঁর দাবি, বিরোধী বৈঠকে তাঁকে যেতে দেওয়া হলে, তিনি তাঁদের আশ্বস্ত করতে চান, আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে (Presidential Election) বিরোধীরা যেন তাঁকেই ভোট দেন। তাঁর বিশ্বাস, তিনিই একমাত্র সুযোগ্য প্রার্থী। যিনি শিক্ষিত, রুচিশীল, মার্জিত ও বিহার রাজ্যের প্রতিনিধি ও ততোধিক জরুরি, তিনি অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত নন।
স্বাভাবিকভাবেই শ্যামনন্দন প্রসাদের গগনচুম্বী ‘আত্মবিশ্বাস’ দেখে চমকে গিয়েছেন সংসদ ভবনের কর্মচারীরা। কিন্তু প্রত্যাশিতভাবেই শ্যামনন্দনকে এনেক্সিতে যাওয়ার অনুমতি দেননি তাঁরা। তাতে হাল ছাড়েননি তিনি। রিসেপশনেই বসে টানা দু’দিন অপেক্ষা করে, অবশেষে এদিন পাটনা ফিরে গেলেন দ্রৌপদী মুর্মু ও যশবন্ত সিনহার পাশাপাশি আরেক রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী শ্যামনন্দন প্রসাদ।
সচিবালয়ের এক আধিকারিকের মতে, যতদিন যাচ্ছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বাড়ছে টানটান উত্তেজনা। আর সংসদ ভবনে বাড়ছে বিচিত্র সব মানুষের ভিড়। তাঁদের অদ্ভুত দাবিদাওয়া, কিম্ভুত আবদার। দাবি না মেটানো হলে তাঁরা জুড়ে দিচ্ছেন সাংঘাতিক হইহল্লা। ১৮ জুলাইয়ের নির্বাচন শুধুমাত্র এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু ও বিরোধী দলীয় প্রার্থী যশবন্ত সিনহার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তাতে রয়েছেন আরও ১১ জন। সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ যাবৎ ১৫ প্রার্থী নমিনেশন জমা দেন। যার মধ্যে বাতিল হয় চারটি। বাকি ১১ জন ইতিমধ্যেই তাঁদের মনোনয়ন জমা করেছেন সংসদে। তাঁরা হলেন, কে পদ্মনাভন (তামিলনাড়ু), জীবন কুমার মিত্তল (দিল্লি), মহম্মদ এ হামিদ পটেল (মহারাষ্ট্র), সায়রা বানূ মহম্মদ পটেল (মহারাষ্ট্র), টি রমেশ (কেরল), শ্যামনন্দন প্রসাদ (বিহার), দয়াশংকর আতরওয়াল (দিল্লি), ওমপ্রকাশ খরবান্দা (দিল্লি), এ মণিথন (তামিলনাড়ু), এম তিরুপতি রেড্ডি (অন্ধ্রপ্রদেশ) ও লালুপ্রসাদ যাদব (বিহার)। বলে রাখা প্রয়োজন, এই লালুপ্রসাদ, আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব নন যিনি কথায় কথায় ‘আরে হ্যাঁট বুরবক’ বা ‘জিসকা লাঠি উসকা ভৈইস’-এর বিখ্যাত স্লোগান দিয়ে থাকেন ও গো খাদ্য ঘোটালায় অভিযুক্ত।
লোকসভার নিরাপত্তারক্ষীদের দশা আরও করুণ। অধিকাংশ তথাকথিত ‘অখ্যাত’ প্রার্থীরা প্রায় নিত্যদিন আজব আজব দাবিদাওয়া নিয়ে এসে চড়াও হচ্ছেন সংসদে। কেউ লোটা করে গঙ্গাজল এনে সর্বত্র ছড়াচ্ছেন, কেউ রংবেরংয়ের বিদঘুটে কাপড় পরে এসে চমকে দিচ্ছেন। কেউ ভুলেভরা ইংরেজি আওড়ে নিরাপত্তারক্ষীদের মনে প্রভাব ফেলতে উদ্যোগী, কেউ কেউ আবার সবাইকে পাইকারি হারে গোলাপ বিলিয়ে যাচ্ছেন, শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা দিতে। কেউ সংসদ ঘুরে দেখতে চান, কেউ বা চান বিরোধী বৈঠকে গিয়ে নিজের ফরমায়েশ পেশ করতে। মনমতো না হলে বেজায় হাঁকডাকও করছেন অনেকে। সতর্ক করছেন, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের সঙ্গে যেন রয়েসয়ে কথা বলেন সংসদের কর্মীরা। কারণ, পরবর্তীতে রাইসিনা হিল দখলে এলে সবাইকে একহাত দেখে নেবেন।
বিহারের শ্যামনন্দন প্রসাদ আদতে শিক্ষিত, মার্জিত ও অমায়িক স্বভাবের। তিনি বিরোধীদের সমর্থন চেয়েছিলেন। কিন্তু পার্লামেন্ট এনেক্সিতে প্রবেশাধিকার না পাওয়ায়, টানা দু’দিন সংসদের রিসেপশনে বসে থাকেন তিনি। সকাল সকাল এসে বসে থাকতেন, সন্ধ্যে নাগাদ ফিরে আসতেন। টানা দু’দিন এভাবেই কাটিয়েছেন তিনি। কারুর প্রতি কোনও অভিযোগ করেননি। নিজে বাবু রাজেন্দ্র প্রসাদ ও জয়প্রকাশ নারায়ণের অনুগামী বলে দাবি করা শ্যামনন্দন তাঁর প্রেস রিলিজে ‘শপথ’ করেছেন, দেশের রাষ্ট্রপতি হলে তাঁর বেতনের ৫০ শতাংশ আর্মি ও ৫০ শতাংশ কৃষকদের উন্নয়নে খরচা করবেন, মাটিতে শোবেন, দেশের গরিবদের উন্নয়নে কাজ করবেন এবং পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ রক্ষায় ব্রতী হবেন।
এদিন পাটনার ট্রেনে ওঠার আগে ৭২ বছরের ইঞ্জিনিয়ার শ্যামনন্দন প্রসাদের বয়ান, ‘দেশের জন্য তৈরি সংসদ, তাতে যদি দেশের সাধারণ মানুষই প্রবেশের অনুমতি না পায়, রাষ্ট্রপতি ভবনে না জানি কী হবে? রাষ্ট্রপতি হলে রাইসিনা হিল ও পার্লামেন্ট-দুটোই সাধারণ মানুষের জন্য অবাধ করে দেব।’ জানা নেই, শ্যামনন্দনের মতো আরও ১১ জন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর ‘স্বপ্ন’ কোনওদিন সফল হবে কিনা, তবু তাঁরা আজও স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্ন দেখছেন, নিজ নিজ গুণে ভারতের রাষ্ট্রপতি হওয়ার।
আরও পড়ুন: President Election 2022 | মনোনয়ন জমা দিলেন এনডিএ’র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু