কল্লোল মজুমদার, মালদা : এনআরসি, সিএএ আতঙ্ক শেষ হতে না হতেই এবার করোনো আতঙ্কে মালদার মানুষ। তবে করোনো আতঙ্ককে যে ছাপিয়ে গিয়েছে এনআরসি আতঙ্ক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকার যখন করোনা থেকে মুক্তি পেতে মিছিল, মিটিং, জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, ঠিক তখনই এনআরসির বিপদ কাটিয়ে তুলতে আধার কার্ড সংশোধনের জন্য লম্বা লাইন দিচ্ছেন ভোরবেলা থেকেই। করোনা নিয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রতিদিনই জেলা প্রশাসনিক ভবন চত্বরে ভিড়ে ঠাসাঠাসি আধার কার্ড সংশোধনের জন্য। তারই মধ্যে চলছে কালোবাজারি।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনিক ভবন চত্বরে খোলা হয়েছে আধার কার্ড সংশোধনকেন্দ্র। প্রতিদিন সকাল থেকেই কয়েক হাজার মানুষের ভিড় জমছে আধার সেবাকেন্দ্রের সামনে। প্রথমদিকে লাইনের ভিত্তিতে আধার কার্ড সংশোধনের কাজ হলেও এখন তা করা হচ্ছে কুপনের ভিত্তিতে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, প্রতিদিন হাজারো মানুষের লাইনে প্রথম ৭৫ জনকে কুপন দেওয়া হচ্ছে। সেই কুপনের সিরিয়াল অনুযায়ী সংশোধনের কাজ চলছে। আরও অভিযোগ, সেই কুপনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসনিক ভবন চত্বরে গজিয়ে উঠেছে দালালচক্র। স্থানীয় কিছু মানুষ খুব সকালে এসে কুপন সংগ্রহ করে নিচ্ছে। মালদা জেলার দূরদূরান্ত থেকে আধার কার্ড সংশোধন করতে আসা মানুষের কাছে সেই কুপন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। আরও অভিযোগ উঠেছে, কুপন ফুরিয়ে গেলে পরের দিনের জন্য অগ্রিম বুকিংও হচ্ছে। একেকটি কুপনের বিনিময়ে নেওয়া হচ্ছে পাঁচশো টাকা করে।
বেশ কিছুদিন ধরে এই দালালচক্র সক্রিয় হয়ে থাকলেও মঙ্গলবার তা নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন এক মহিলা ফিরদৌসি খাতুন। তিনি ইংরেজবাজারের বাঁধাপুকুর এলাকার বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, আমি আধার সেবাকেন্দ্রের সামনে গত কয়েকদিন ধরে লাইন দিচ্ছিলাম। কিন্তু কোনওদিনই প্রথম ৭৫ জনের মধ্যে থাকতে পারিনি। তাই দিনের পর দিন ঘুরে যেতে হচ্ছে। সোমবার আমি এসেছিলাম। কুপন না পেয়ে গাছতলায় দাঁড়িয়েছিলাম। সেই সময় একজন আমার কাছে এসে বলে, সে আমার জন্য একটা কুপনের ব্যবস্থা করে দেবে। বিনিময়ে তাকে ৫০০ টাকা দিতে হবে। প্রতিদিন শহরে এসে ফিরে যাওয়ার চাইতে আমি তাকে ৫০০ টাকা হাতে দিই। কথা ছিল আজ আমার হাতে কুপন দেবে। আমি আজ এসেছি। কিন্তু ওই মানুষটিকে খুঁজে পাচ্ছি না।
তবে শুধু ফিরদৌসি খাতুনেরই অভিযোগ নয়, বহু মানুষই এইভাবে দালালদের খপ্পরে পড়ছেন প্রতিদিন। যদিও এই নিয়ে প্রশাসনের কাছে এই মুহূর্তে কেউ লিখিত অভিযোগ জানাতে রাজি নন। তবে এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সদর মহকুমা শাসক সুরেশচন্দ্র রানো বলেন, আমাদের দপ্তরের কোনও কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তবে সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা একটি সুয়োমোটো মামলা করছি। যদি কেউ ধরা পড়ে, তবে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।