মহুয়া চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: আপনার শিশু যেমন আপনার ভবিষ্যৎ তেমনই শিশুর ভবিষ্যৎ আপনি , অর্থাৎ শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ আপনার সিদ্ধান্তের সু-চালনায় নিয়ন্ত্রিত। ভালো স্কুল, ভালো খাবার, ভালো টিচার,সঞ্চয়- বিনিয়োগ, মাসে একবার শপিং, বছরে একবার ঘুরতে যাওয়া এরকমটাই করেন সব বাবা-মা ; কিন্তু সন্তানদের মধ্যে দিন শেষে পার্থক্য ধরা পড়ে দিনের আলোর মতোই , কেন? আমরা অসন্তুষ্ট হই শিশুর রেজাল্টে, আচরণে ,বায়নায়, বকাবকি করি ওদের সরল মনটাকে না বুঝে । পাশাপাশি অন্যের বাচ্চার সবকিছুই ভালো দেখে আক্রোশ ঝরাই অবচেতনে নিজের আত্মজের ওপর । এই প্যান্ডামিকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে কিন্তু শিশুদেরই , শারীরিক – মানসিক উভয় দিকেই তারা এতটাই অশান্তির মধ্যে ছিল যে ওটা বায়না, দুষ্টুমি ,কথা না শোনার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। বেশী খেয়ে ফেলা , টিভি , মোবাইল দেখা ,ঠিক সময়ে না ঘুমনো , খিটখিটে মেজাজ, ব্যবহারে অসামঞ্জস্য আমরা দেখছি, যা দেখছিনা তা হল ওদের মনের অস্থিরতা, হারাবার ভয়, সমাজে না মেশার জন্য সমাজকে ধীরে ধীরে ভয় পাওয়া আর মৃত্যু ভয় ; যদি মা-বাবা না থাকে , দাদু – দিদা -ঠাকুমা যদি না থাকে কি হবে? এইসব ভাবনা ওদের কুরে কুরে খায়। এরই বহিঃপ্রকাশ ওদের অবাধ্যতায় থাকে।
সমাধানের রাস্তা কোথায়?
রাস্তা আমাদের কাছেই, ওদের আগে যতটা সময় দিতেন এখন আর একটু বেশী সময় দিতে হবে।
কিভাবে?
১) সময় কাটান ওদের সাথে, গল্প বলুন, কবিতা শোনান, লুডো – ক্যারাম- দাবা – ভিডিও গেম – খেলুন। ওদের সৃজনীক্ষমতার প্রশংসা করুন।
২) সবার কথা শোনার অভ্যেস নতুন করে তৈরি করুন, সাথেসাথে ওদের কথারও মান্যতা দিন।
৩) ঘরের কাজে যেমন জল ভরা, নিজের জামা – বই – খাতা গুছিয়ে রাখা, ছোট ভাই- বোনের দেখাশোনা করা , স্কুলের হোমটাস্ক গুলো দেখিয়ে দেওয়া, আদর করে খাইয়ে দেওয়ার মধ্যে ব্যস্ত রাখুন।
৪) একটু বড় বাচ্চারা নিজেরাই স্বাবলম্বী, তারা আবার প্রাইভেট স্পেসে বিশ্বাসী। সেটা ওদের দিতে হবে , কিন্তু নজর রাখুন কোন কু-অভ্যাসের জন্যই কি এই আলাদা ঘর? নাকি সত্যিই ওর প্রয়োজন।
৫) শুধুমাত্র পড়াশোনাতেই আটকে না রেখে খেলার দিকে ওদের মন ঘুরিয়ে দিন, ক্রিকেট,ফুটবল, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস জাতীয় পরিশ্রমসাধ্য খেলায় যুক্ত করে দিন; শারীরিক- মানসিক দুই দিকেই লাভবান হবে শিশুরা। নাচ ভালো লাগলে সেটাও খুব ভালো অপশন।
৬) সপ্তাহে একদিন সবাই মিলে ছাদে বাগান করা,বাড়ী পরিষ্কার করা,রান্নাঘরের কাজ করা, আলমারি গোছানো ইত্যাদি কাজগুলো করলে শিশুরাও উৎসাহ পাবে কাজের।
৭) অন্যদের সঙ্গে তুলনা না করে ওকে ওর মতো করে গড়ে উঠতে দিন, ওর ভাললাগা বা ওর কাজকে উৎসাহিত করুন।
৮) বাড়ীর খাবার ছাড়া বাইরের খাবারে অভ্যস্ত করবেন না। একদিন-দুদিন খাওয়া গেলেও অভ্যাসের ওপর গুরুত্ব দিন।
৯) জল-ফল-ব্যায়াম- যোগাসন নিজেদের রোজকার জীবনযাত্রায় আনুন, আপনাকে দেখে সন্তানেরও ইচ্ছে করবে এই ভালো স্বভাবকে অ্যাডপ্ট করার।
১০) সকাল-দুপুর – বিকেল -রাত্রির মধ্যে যেকোনো ১ বা ২ সময়ে একসাথে বসে খাবার সিস্টেম তৈরি করুন এতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়।
আপনার শিশুর সুকোমল মনটাকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন সামান্য কিছু চিন্তার পরিবর্তন করে, নিজের সময়কে সঠিক ব্যবহার করে, বুদ্ধি দিয়ে; তাহলেই দেখবেন ভয়কে জয় করে, নেগেটিভ থেকে পজেটিভ হতে ভগ্নাংশেরও কম সময়ে আপনার শিশু হাসি মুখে তৈরি জীবনযুদ্ধের জন্য।
আরও পড়ুন : গরমে সুস্থ থাকার কিছু উপায়, জেনে নিন…