সৌরভকুমার মিশ্র, হরিশ্চন্দ্রপুর : করোনা সংক্রমণ এড়াতে যখন গোটা দেশ কার্যত ঘরবন্দি, তখনও কর্তব্যের খাতিরে একনিষ্ঠায় কাজ করে চলেছেন জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা। ব্যতিক্রম নয় পুলিশ-প্রশাসনও। সংক্রমণের ভয় ও পরিবারের জন্য চিন্তা মুহূর্তের জন্য পিছু ছাড়েনি তাঁদের। তবু তার মধ্যেই এলাকাগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা।
একই ছবি দেখা গেল হরিশ্চন্দ্রপুর থানাতেও। অন্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও সকাল থেকেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানার সমস্ত পুলিশ আধিকারিক, সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ভিলেজ পুলিশ মাঠে নেমে পড়েন। এলাকায় জমায়েত নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকাতেও পৌঁছে যান তাঁরা। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সেসব এলাকার মানুষদের সচেতন করার পাশাপাশি তাঁদের অনুরোধ করেন লকডাউন মেনে চলার জন্যও। কিন্তু সেক্ষেত্রে সংক্রমণ ঠেকাতে পুলিশের সঙ্গী কেবল মাস্ক। নিজেদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা না থাকলেও, তার মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। কারণ, দেশ তথা রাজ্যের জরুরি অবস্থায় তাঁরাই এখন মানুষের আশা-ভরসা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিভিক ভলান্টিয়ার জানালেন, আমরা সাধারণ মানুষকে সবসময় বোঝাচ্ছি অযথা আতঙ্কিত হবেন না। লকডাউন মেনে চলুন। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে ঘরে থাকুন। অযথা ভিড় করবেন না। জমায়ের করবেন না। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের সব সময় বাইরে থাকতে হচ্ছে। এই নিয়ে আমাদের পরিবার চিন্তিত। আমরাও চাই সবাই এটা বুঝুক।
এরমধ্যে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার মানবিক মুখ দেখেছে এলাকাবাসী। সরকার নির্ধারিত র্যাশন না পেয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় এসেছিলেন এক বৃদ্ধ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সমস্যার সমাধান করে দেয় পুলিশ। ওই বৃদ্ধ যাতে ডিলারের কাছ থেকে শীঘ্রই র্যাশন পান, সেই আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর হাতে বেশ কয়ের দিনের খাবারও তুলে দেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয়কুমার দাস। এমনকি অসহায় বৃদ্ধকে বাড়িও পৌঁছে দেয় পুলিশ। হরিশ্চন্দ্রপুরের পিপলা গ্রামের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের নাম লাল্টু দাস। তিনি জানান, হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি আমাকে র্যাশন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকদিনের খাবারও তিনি আমাকে দিয়েছেন। পুলিশের কাছ থেকে এই দুর্দিনে এমন সহযোগিতা পেয়ে আমি আপ্লুত।
অন্যদিকে, বেশ কিছুদিন আগে গড়গড়ি গ্রামের এক বৃদ্ধা কয়েদিন ধরেই অভুক্ত অবস্থায় ছিলেন। লকডাউনের মধ্যে পড়ে কাজ করতে যেতে পারেননি, তাই জোটেনি খাবারও। খবর পেয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ওই বৃদ্ধার বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, এসব নিয়ে আমরা প্রচার চাই না। আসতে চাই না সংবাদ শিরোনামেও। বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আমাদের কাজ করতে হয়। এটা আমাদের কর্তব্য। আমরা শিখেছি, জরুরি সময় পিছিয়ে আসতে হয় না। পরিবারের জন্য আমাদেরও চিন্তা হয়। কিন্তু আমাদের শুধু নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করলে হবে না।