জলপাইগুড়ি : জলপাইগুড়ির সঞ্জয়দের হাঁড়ির হাল ভালো নয়। বললেন, বাচ্চার পেট তো লকডাউন মানছে না। তিন মেয়ে খিদে পেলেই চ্যাঁচায়। বিরক্ত নয়, একটু যেন বিষণ্ণই মনে হল সঞ্জয়কে। বললেন, রিকশায় লকডাউন। রোজগার বন্ধ। অত খাবার পাব কোথায় বলুন তো। তার ওপর ছোট মেয়েটার দুধ চাই। বউ সুজির লেই করে খাওয়াচ্ছে। এভাবেই চলছে। কপালের ঘাম মুছলেন। তারপর বললেন, পেটের খিদে মেটাতে নিরুপায় হয়ে মাঝেমধ্যে শহরে রিকশা নিয়ে বের হচ্ছি। শুধু সঞ্জয় পাসোয়ানই নন, শহরে প্রায় দু হাজার রিকশাচালকের হাঁড়ির হাল একই। সঞ্জয় বলেন, আমাদের বাড়িতে কীভাবে হাঁড়ি চড়ছে তার খোঁজ কে রাখে বলুন। আমি বিপিএল হওয়া সত্ত্বেও আমাকে এপিএল করে দেওয়া হয়েছে। আমরা যাঁরা খাবারের সংস্থান করতে পারিনি তাঁরাই রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়ছি রাস্তায়।
শহরের পুরসভা এলাকার ২৫টি ওয়ার্ডের পাশাপাশি মোহিতনগর, রাহুতবাগান, মণ্ডলঘাট, হলদিবাড়ি থেকে রিকশাচালকরা আসেন। টেম্পল স্ট্রিটের কাছে দেখা হল শাহিদুল মহম্মদের সঙ্গে। পঞ্চাশোর্ধ্ব শাহিদুল বিপত্নীক। সংসারে রয়েছেন বিধবা মা সজিমন বেওয়া। বললেন, জানি লকডাউনে রিকশা চালানো ঠিক নয়। বাধ্য হয়ে বেরোতে হয়। দিনে ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা রোজগার হচ্ছে। দিনের শেষে চাল, ডাল আর আলু কিনে বাড়ি ফিরছি। এভাবে আর কতদিন চলবে জানি না। পাঙ্গার ললিত রায় পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে জলপাইগুড়ি শহরে তিনি রিকশা চালান। অতীতে কোনওদিন তাঁকে এমন প্রতিকূল অবস্থার মুখে পড়তে হয়নি। আর্থিক অনটনের জন্য রাতে ছেলেমেয়েদের গোলারুটি খাওয়াচ্ছেন।
চার নম্বর গুমটির জয়দেব দাস বলেন, আমার ওপর পরিবারের পাঁচজন নির্ভরশীল। রোজগার এখন তলানিতে। সঞ্চিত টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। কীভাবে খাবারের সংস্থান করব তা ভেবে পাচ্ছি না। কুমারপাড়ার লালবিহারী দাস বলেন, ভোরে শহরে চলে আসছি। দুপুরে খিদের জ্বালায় মুড়ি খাচ্ছি। দিনের শেষে গড়ে ৮০ টাকা রোজগার করে বাড়ি ফিরছি। এই আয়ে আটজনের পেট ভরাতে হচ্ছে। এইভাবে কতদিন চলতে পারব জানি না।