লখনউ: উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে দলিত তরুণীর গণধর্ষণ-মৃত্যুর পরে পরিবারের হাতে দেহ তুলে না দেওয়ার ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ। ঘটনায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি, ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি-সহ বিদ্বজনেরা সরব হয়েছেন। তারা উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ও যোগী আদিত্যনাথ সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন। এবার টুইট করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পদত্যাগ দাবি করলেন উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধি।
@myogiadityanath RESIGN
Instead of protecting the victim and her family, your government became complicit in depriving her of every single human right, even in death. You have no moral right to continue as Chief Minister. 3/3
— Priyanka Gandhi Vadra (@priyankagandhi) September 30, 2020
বুধবার সকাল থেকে একের পর এক টুইট করে প্রিয়ঙ্কা নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। টুইট করে তিনি জানান, তরুণীর বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন, যখন তিনি তাঁর মেয়ের মৃত্যুর খবর পান। প্রিয়ঙ্কা গান্ধি বলেন, “আমি হাথরাসের তরুণীর বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম, যখন তাঁকে জানানো হয় তাঁর মেয়ে মারা গিয়েছেন। আমি একজন পিতার কান্না শুনেছি।”
আর একটি টুইটে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বলেন, “উনি আমাকে বলেছেন, উনি কেবলমাত্র সন্তানের ন্যায় বিচার চান। গত রাতে তাঁকে নিজের মেয়ের দেহ শেষবার বাড়ি নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্য করার সুযোগটুকুও দেওয়া হয়নি। ধর্ষিতা তরুণী ও তাঁর পরিবারকে রক্ষা করার বদলে আপনার সরকার মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের শেষ অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকার আপনার কোনও অধিকার নেই।”
ধর্ষিতা তরুণীর বাবা প্রিয়ঙ্কা গান্ধির সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি একজন আত্মীয়কে ফোনটি দিয়ে দেন। প্রিয়ঙ্কাকে বলতে শোনা যায়, তিনি তরুণীর দেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন কিনা। পরিবার কী চায় সেটাও জানতে চান প্রিয়ঙ্কা। তাতে তরুণীর আত্মীয় বলেন, “আমরা ন্যায় চাই। আমরা চাই অপরাধীদের ফাঁসি হোক।”
গত ১৪ সেপ্টেম্বর নিজের গ্রামেই একটি পরিত্যক্ত জায়গায় তুলে নিয়ে গিয়ে তফশিলী জাতিভুক্ত তরুণীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করার পাশাপাশি তাঁর জিভ কামড়ে ছিঁড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ধর্ষকরা। ক্ষতবিক্ষত তরুণীকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। ঘটনার তিন দিনের মাথায় মোট চারজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আপাতত জেলে রয়েছে তারা। সূত্রের খবর, অভিযুক্তরা তথাকথিত উঁচু জাতের। তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, রাতে বাড়ি না ফেরায় তাঁরা স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ কোনও গা করেনি। আরও আগে যদি মেয়েকে উদ্ধার করা যেত তাহলে হয়তো প্রাণে মরতে হতো না। মৃতের ভাইয়ের আরও অভিযোগ, দিদির দেহ সৎকারের আগেই মধ্যরাতে তা ছিনিয়ে নেয় পুলিশ। এবং পরিত্যক্ত একটি জায়গায় তা দাহ করা হয়। তাঁদের থেকে কোনও অনুমতি না নিয়েই পুলিশ এই কাজ করেছে।
টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। রাহুলের টুইট করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দূরে একটি কাঠের স্তূপের মধ্যে আগুন জ্বলছে। চারিদিক ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ভিডিওতে এও শোনা যাচ্ছে, একজন মহিলা সাংবাদিক দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশ কর্তাকে জিজ্ঞেস করছেন, ওখানে কী জ্বলছে? পুলিশ কর্তা জবাব দিচ্ছেন জানি না। ফের তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ওখানে কি মৃত দেহ সৎকার হচ্ছে? তার জবাবে তিনি বলেন, ডিএমকে জিজ্ঞাসা করুন।
What happened in #Hathras is inhumane and goes beyond cruelty. Hope the culprits of this heinous crime will be brought to justice. #JusticeForManishaValmiki
— Virat Kohli (@imVkohli) September 29, 2020
রাহুল গান্ধি ছাড়াও ঘটনার প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিলেন বিরাট কোহলি। সঙ্গে তিনি অপরাধীদের উচিত শাস্তিরও দাবি জানালেন। তিনি টুইটারে লেখেন, ‘হাথরাসে যা ঘটেছে, তা অমানবিক এবং নৃশংসতার সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আশা করি এমন জঘন্য অপরাধকারীদের যথাযথ বিচার হবে।’