জসিমুদ্দিন আহম্মদ, মালদা : অকালবৃষ্টি এবং লাগাতার ঠান্ডায় আমের যা ক্ষতি হওয়ার আগেই হয়েছে। যেটুকু আম বাগানগুলিতে ছিল লকডাউনের জেরে তাও টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমচাষিদের। এই সময় বাগানে আম টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন লাগাতার কীটনাশক স্প্রে। লকডাউনের ফলে মিলছে না বাগান পরিচর্যার জন্য শ্রমিক। বন্ধ দোকান মিলছে না কীটনাশক। আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সবাইকে পথে বসতে হবে। ধাক্কা খাবে জেলার অর্থনীতি। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাগান পরিচর্যাকারী শ্রমিকেরা। তাঁদের কাজও বন্ধ। ঘরে খাবার নেই। কীভাবে দিন কাটবে, তার উত্তর নেই কারোর কাছে।
মালদা জেলার প্রধান অর্থনৈতিক ফসল আম। এই জেলায় ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়ে থাকে। আমের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। এমনিতেই এবছর শীতের দাপট বেশিদিন থাকায় আমের মুকুল দেরিতে এসেছে। তবে দেরিতে হলেও প্রতিটি গাছে মুকুলে ছেয়ে যায়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলেন সবাই। কিন্তু মুকুল গাছে থাকতেই জেলাজুড়ে শুরু হয় অকালবৃষ্টি। বৃষ্টির ফলে ৫০ শতাংশ গাছের মুকুলে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়েছে। ফলে মুকুল শুকিয়ে ঝরে পড়তে শুরু করে। তবে এত কিছুর গাছগুলিতে আমের গুটি এসেছে। এই আমকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল উপযুক্ত পরিচর্যা। তা না থাকায় আমের গুটিগুলিতে কালো দাগ ধরছে। খসে পড়ছে গাছ থেকে।
ইংরেজবাজারের অমৃতি বটতল্লি এলাকার আম ব্যবসায়ী রইফুল শেখ। তাঁর আমবাগানে ১২০০ গাছ রয়েছে। তিনি বলেন, এবছর আমের ব্যবসা প্রায়ই শেষ। আমরা শ্রমিক পাচ্ছি না, যে বাগান পরিচর্যা করব। আমে কালো দাগ দেখা যাচ্ছে। আম ব্যবসায়ী নাবিরুল শেখ বলেন, মরশুমের শুরুতেই অকালবৃষ্টি হয়েছিল। লকডাউনের ফলে শ্রমিকরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। ফলে বাকি আমও ঝরে পড়তে শুরু করেছে। এবার আমরা পুরোপুরি সর্বস্বান্ত হয়ে যাব। অমৃতির শ্রমিক রোজিউল শেখ এই সময় আমবাগান পরিচর্যার কাজ করেন। রোজিউল বলেন, এই সময় আমবাগানে কাজ করেই ভালো রোজগার হয়। কিন্তু করোনার জন্য সবকিছু উলট-পালট হয়ে গেল। এখন কী করে চলব তা ভেবে উঠতে পারছি না। বাড়িতে যা খাবার ছিল তাও শেষ। ৫ কেজি চাল আর আলু পেয়েছি। তারপর না খেয়ে থাকতে হবে।