ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি : বেসরকারি কোম্পানির কর্মী কিংবা এজেন্ট। লকডাউনের জেরে আয় সম্পূর্ণ বন্ধ। বিশেষ করে যারা বাইরে থেকে এসে শিলিগুড়িতে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করছেন তাঁরা বেশি সমস্যায় পড়েছেন। না হচ্ছে কোনও আয়, না দিতে পারছেন ঘরভাড়া। কারণ লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কমিশনও বন্ধ। যারা বেসরকারি কোম্পানির অফিসে বসে কাজ করেন তাঁদের অনেকেই গতমাসের বেতন পাননি। বিশেষ করে শহরের বিভিন্ন দোকানে কর্মরত যুবকদের অবস্থা বেশি খারাপ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের আয়ে উপর তাঁদের গোটা পরিবার নির্ভরশীল। কিন্তু দোকান বন্ধ থাকায় আয় প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের এখন ভরসা সরকারি সাহায্য। অনেকে আবার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির কাছে প্রতিদিন দৌড়াচ্ছেন ত্রাণের আশায়। কখনও সেই ত্রাণ মিলছে আবার কখনও মিলছে না।
শিলিগুড়ির পাকুড়তলা মোড়ের নন্দকিশোর শা নামে এক যুবক একটি নামী কোম্পানির বই ঘুরে ঘুরে বিক্রি করার কাজ করার জন্য বাইরে থেকে এসেছেন। কিন্তু এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বই বিক্রিও হচ্ছে না, আয়ও হচ্ছে না। তাঁর বক্তব্য, এভাবে কতদিন যে চলবে জানি না। বাইরে থেকে এসেছি। কাউকে চিনিও না। তাও এদিন একজন এসে কিছু চাল দিয়ে গিয়েছেন। বহুদিন থেকেই শিলিগুড়িতে আছি। গাড়ি বন্ধ থাকায় ঝাড়খণ্ডে বাড়িও ফিরে য়েতে পারছি না। কবে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বুঝতে পারছি না। লকডাউনের ফলে সমস্যায় পড়েছেন শিলিগুড়ির শিল্পীমহলের একাংশও। যাঁরা বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করে কিংবা গানবাজনার টিউশন করে সংসার চালান তাঁদেরও কঠিন পরিস্থিতি।
কারণ লকডাউনের কারণে কেউ রাস্তায় বের হচ্ছেন না। যার ফলে শিক্ষকদের টিউশন ফিও মিলছে না। শিল্পীদের পক্ষে অনির্বাণ দাসের বক্তব্য, শুধু শিলিগুড়ি শহরই নয়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় শিল্পীরা যাঁরা শুধুমাত্র টিউশনের উপর নির্ভরশীল, তাঁদের অবস্থা সত্যিই খারাপ। তবে শিল্পীদের একটা সংগঠন আছে, সেখান থেকে কিছু সাহায্য করা হচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? কারণ লকডাউন উঠে গিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলেও কোনও অনুষ্ঠান করার চিন্তা এই মুহূর্তে কোনও সংগঠনই করবে না। তাই আরও কতদিন যে শিল্পীদের এই পরিস্থিতির মধ্যে চলতে হবে জানা নেই।
শুধু গানবাজনার শিক্ষকই নন, যারা প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান তাঁদের দুমাস ধরে আয় বন্ধ। লকডাউনের কারণে কোনও ছাত্রছাত্রীই আর পড়তে আসছেন না। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটাও কেউ বলতে পারছেন না। যার ফলে আর কতদিন এই সমস্যার মধ্যে চলতে হবে সেটাও অজানা। পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির দার্জিলিং জেলা সম্পাদক বিবেকানন্দ সাহা বলেন, আমাদের যারা প্রাইভেট টিউটর আছেন তাঁরা খুব সমস্যায় রয়েছেন। দুমাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। আমরা সমাজের এমন একটা জায়গায় রয়েছি, লোকের কাছে হাত পাততেও পারি না। কিন্তু সমস্যাও রয়েছে। গ্রামের শিক্ষকদের অবস্থা আরও খারাপ।