শিলিগুড়ি: তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই ধৃত শিক্ষক পঙ্কজ বর্মনকে (Pankaj Barman) নিয়ে রহস্যের জট আলগা হতে শুরু করেছে। এবার প্রশ্ন উঠেছে পঙ্কজের বদলি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও। এদিকে, সংস্কৃতের ওই শিক্ষক গ্রেপ্তার হওয়ায় চিন্তায় বরদাকান্ত বিদ্যাপীঠ কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পঠনপাঠন কী করে হবে তা নিযে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উত্তর দিনাজপুরের বাহাড়াইল ভুবনচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় থেকে বদলি নিয়ে পঙ্কজ শিলিগুড়ির বরদাকান্ত বিদ্যাপীঠে যোগ দেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি উত্তর দিনাজপুরের ওই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা করছিলেন। সূত্রের খবর, বদলির নির্দেশিকা পাওয়ার পর ৮ মাস কেটে গেলেও বরদাকান্ত বিদ্যাপীঠে যোগ দেননি পঙ্কজ। এই সময়ের মধ্যে তিনি বদলির সময়সীমাও বাড়াননি। তবে কীভাবে তিনি নতুন বিদ্যালয়ে কাজে যোগ দিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, এক্ষেত্রে নিজস্ব পরিচিতিকে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। যেখানে, নিয়ম অনুযায়ী বদলির নির্দেশিকা পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে নতুন বিদ্যালয়ে যোগদান করতে হয়, সেখানে আট মাস পর কীভাবে তিনি স্কুলে যোগ দিলেন? বরদাকান্ত বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব সরকারের দাবি, ‘এক বছর হয়েছে এই বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছে। পঙ্কজের বদলির বিষয়টি সঠিক জানা নেই।‘ শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক রাজীব প্রামাণিক বলছেন, ‘বোর্ড থেকে বদলির নির্দেশিকার সময়সীমা বাড়িয়ে না নিলে কোনওভাবে নির্দিষ্ট সময়ের পর যোগদান করা যায় না। তবে এক্ষেত্রে কী হয়েছে তা জানা নেই।‘
চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ আমবাড়ি চিন্তামোহন হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক সন্তোষ বর্মনকে গ্রেপ্তার করেছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, সন্তোষ তাঁর এক নিকটাত্মীয়ের চাকরি করিয়ে দেওয়ার জন্য পঙ্কজকে টাকা দিয়েছিলেন। অভিযোগ, এভাবে তিনজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পঙ্কজের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন সন্তোষ। পুলিশ সূত্রে খবর, পঙ্কজের গ্রেপ্তারির পর দু’দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় তাঁর টাকার লেনদেনের সমস্ত তথ্য জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার পুলিশ সেই তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করবে।
বরদাকান্ত বিদ্যাপীঠের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকের দাবি, পঙ্কজ স্কুল চলাকালীন অধিকাংশ দিন বাইরে বেরিয়ে যেতেন। বিদ্যালয়ে যেটুকু সময় থাকতেন, তারমধ্যে বেশিরভাগ সময় তিনি মাঠে দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। সংস্কৃত একজন শিক্ষকের অধিকাংশ দিন এত ব্যস্ত থাকার কারণ কী তা নিযে শিক্ষকমহলে গুঞ্জন ছিলই। তবে পঙ্কজ যে এত বড় প্রতারণা কাণ্ডে জড়িয়ে পড়বেন তা কল্পনা করতে পারেননি কেউই।
পঙ্কজ গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁর জায়গায় সংস্কৃত ক্লাস কে নেবেন তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ চিন্তায় পড়েছে। কেননা প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা এমনিতেই কম। সপ্তম, অষ্টম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ওই স্কুলে সংস্কৃত পড়ানো হয়। পঙ্কজ চলে যাওয়ায় বর্তমানে দুজন সংস্কৃতের শিক্ষক রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে একজন স্থাযী এবং অপরজন প্যারাটিচার। ওই শিক্ষকদের সংস্কৃত ছাড়াও অন্য বিষয়ে ক্লাস নিতে হয়। হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন ৯টি সেকশনে তাঁদের সংস্কৃত ক্লাস নিতে হবে। প্রধান শিক্ষক বিপ্লব বলছেন, ‘সপ্তাহে অন্ততপক্ষে পাঁচদিন প্রতিটি শ্রেণিতে সংস্কৃত পড়ানো হয়। সেখানে একজন শিক্ষক কমে যাওয়ায় নিশ্চিতভাবে সমস্যা হবে। কীভাবে এর সমাধান হবে, তা নিয়ে জেলা অফিসে কথা বলব।‘
লেটেস্ট খবর জানার জন্য দেখুন www.uttarbangasambad.com এবং ব্রেকিং নিউজ (Breaking News) এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন উত্তরবঙ্গ সংবাদ টিভিতে ।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Instagram পেজ ।
আরও পড়ুন: Raju Bista | সীমান্তে গোরু পাচার রুখতে এবার ময়দানে সাংসদ