তপন বকসি, মুম্বই: বাস্তব জীবনের কাহিনীকে ভিত্তি করে ২০২১ সালের মার্চ মাসে রানি মুখোপাধ্যায়(Rani Mukherjee) তার নিজের ছবি ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’-এর ঘোষণা করেন। অসীমা ছিব্বার পরিচালিত এবং জি স্টুডিও ও এম্মে এন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজিত এই ছবিটির রিলিজ ২০২২-এর মে মাসে হওয়ার কথা থাকলেও করোনা অতিমারির জন্য বিভিন্ন অসুবিধার কারণে ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’-এর নতুন মুক্তির দিন ঘোষণা হল আজ। ছবিটি ২০২৩-এর ৩ মার্চ মাসে রিলিজ হচ্ছে।
২০১১ সালে নরওয়ে সরকার এবং নরওয়ে সরকারের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সার্ভিসেসের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের এক দম্পতি সাগরিকা ভট্টাচার্য ও তার স্বামী অনুরূপ ভট্টাচার্য। ২০০৭ সালে ভূপদার্থবিদ অনুরূপ ভট্টাচার্য বিয়ে করেছিলেন সাগরিকাকে। ২০০৮ সালে তাদের প্রথম পুত্র সন্তান অভিজ্ঞানের জন্ম হয়। জন্ম থেকেই অভিজ্ঞান ছিলেন প্রতিবন্ধী। ২০০৯ সালে অটিজম উপসর্গ থাকা অভিজ্ঞানকে নিয়ে অনুরূপ ও সাগরিকা নরওয়েতে ফিরে যান। ২০১০ সালে সাগরিকা দ্বিতীয়বার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। সেই সময় অভিজ্ঞানকে এই দম্পতি এক কিন্ডারগার্টেনে দিনের বেশ কিছুক্ষণ সময় রাখতে শুরু করেন। সাগরিকার দ্বিতীয় কন্যা সন্তান জন্মানোর পর থেকে অভিজ্ঞানের অটিজম জনিত উপসর্গগুলো আরও বাড়তে থাকে। সদ্যোজাত কন্যা সন্তানের দেখভাল ও পারিবারিক কাজ সামলানোর পর অভিজ্ঞানকে দেখাশোনা সাগরিকার পক্ষে মূলত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সাগরিকার দ্বিতীয় কন্যা সন্তান ঐশ্বর্য জন্মানোর এক মাস আগে অটিজমের উপসর্গ থাকা অভিজ্ঞানের সঙ্গে দ্বিতীয়বার সন্তানসম্ভবা সাগরিকার ব্যবহারে মাতৃত্বের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনে নরওয়েজিয়ান চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সার্ভিসেস। একদিকে দিনের দীর্ঘ সময় নিজের কাজের জগতে ব্যস্ত থাকা স্বামী অনুরূপ, অন্যদিকে অটিজমে ভুগতে থাকা প্রথম পুত্র সন্তান ও দ্বিতীয় সন্তানকে নিয়ে সংসার সামলাতে জেরবার হয়ে পড়েন সাগরিকা। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে কিন্ডারগার্টেন থেকে খবর পেয়ে নরওয়েজিয়ান চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সার্ভিসের সদস্যরা সাগরিকাদের নরওয়ের বাড়ির দরজায় এসে হাজির হয়।
এরপর ২০১১-র মে মাসে দুই সন্তানের মা সাগরিকার সঙ্গে বিতর্ক হয় নরওয়েজিয়ান চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সার্ভিসের আধিকারিকদের সঙ্গে। তারা সাগরিকার দুই সন্তানকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে সাগরিকাকে জানিয়ে দেয় তার দুই সন্তান আঠারো বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত ওয়েলফেয়ার সার্ভিসেসের অধীনে থাকবে। এরপরই মা হিসেবে তীব্র প্রতিবাদ করে ওঠেন সাগরিকা। নরওয়ে সরকারের অত্যন্ত কঠিন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার নিয়মাবলির কড়া অনুশাসন পদ্ধতির শিকার হওয়া এই ভারতীয় দম্পতির হয়ে ভারত সরকার ও ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে নরওয়ের সরকারকে আবেদন জানানো হয়। এর মধ্যেই অনুরূপ ও সাগরিকার দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদ ঘনিয়ে আসে। অবশেষে ২০১২-র এপ্রিল মাসে সিঙ্গল মাদার হিসেবে সাগরিকা তার দুই সন্তানকে ফিরে পান। বাস্তব জীবনের এই কাহিনীকে ভিত্তি করে অবশেষে ছবিটি মুক্তি হচ্ছে সারা ভারতে।
আরও পড়ুনঃ Aamir Khan | ‘বছর খানেক পরেই অভিনয়ে ফিরব’, ‘সালাম ভেনকি’র প্রিমিয়ারে এসে বললেন আমির খান