রায়গঞ্জ: পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের এক জ্বলন্ত সমস্যা। মালদা(Malda), মুর্শিদাবাদ,বর্ধমান, নদিয়া সহ বেশ কিছু জেলায় এক বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ এই সমস্যায় জর্জরিত। সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনগুলি লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন কৌশল আনা হচ্ছে।
এবার আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে এলেন রায়গঞ্জে পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক স্পন্দন ঘোষ। আর্সেনিকমুক্ত পরিস্রুত পানীয় জল তৈরির উপায় বাতলে ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন পেটেন্ট । উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা স্পন্দনবাবু হাওড়ার শিবপুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ল্যাবরেটরিতে টানা পাঁচ বছর গবেষণা করে কেন্দ্রীয় সরকারের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অফ ইন্ডিয়ার স্বীকৃতি লাভ করেছেন। বর্তমানে রায়গঞ্জ পলিটেকনিকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন স্পন্দন। ২০১৭ সাল থেকে লাগাতার পাঁচ বছর গবেষণা করে সাফল্য মিলেছে তাঁর।
এই কাজে তাঁর দুজন সহকর্মী হলেন সৌম্যকান্ত রায় এবং চঞ্চল মজুমদার। গ্রাফিনের মধ্যে লোহা ও ম্যাঙ্গানিজের সংমিশ্রণে নিপুণ দক্ষতায় এই ওয়াটার ফিল্টার প্রস্তুত করেন তিনি। খুব সহজ পদ্ধতিতে প্রতি লিটার জল পরিশোধনের খরচ খুবই কম ।খুব সহজে ২ থেকে ৫ ন্যানোমিটার প্রতি এক লিটার জল পরিশোধন করতে খরচ অতি সামান্য বলে দাবি শিক্ষকের। স্পন্দন জানান,দীর্ঘ ৫ বছর গবেষণার পর সাফল্য মিলেছে। তাঁর দাবি, দুই ভাবে সাধারণ মানুষ আর্সেনিকমুক্ত জল পেতে পারে। একটি হল কমিউনিটি স্তরে স্যান্ড ফিল্টার নির্মাণের মাধ্যমে। আরেকটি হল, বাড়ি বাড়ি কিংবা স্কুল, কলেজ, হাসপাতালে ক্যান্ডেল ফিল্টারের মাধ্যমেও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল মেলা সম্ভব। সেরামিকের সঙ্গে ন্যানোমিটার মিশিয়ে ক্যান্ডেল ফিল্টার তৈরি করতে হবে প্রস্তুতকারক সংস্থাকে। তিনি জানান, এই পদ্ধতি নিয়ে আরও গবেষণা করতে আগ্রহী। সেজন্য কাজও শুরু করেছেন।
চিকিৎসকদের মতে, পানীয় জল ও খাদ্যের মাধ্যমে আমরা প্রতি দিন যে আর্সেনিক গ্রহণ করে চলেছি তা হাড়, লিভার, কিডনি, ত্বক এবং মাংসপেশীতে জমা হয়ে থাকে। এই আর্সেনিক লোহিত রক্তকণিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে রক্তাল্পতা ঘটায়। প্রোটিন ও উৎসেচকের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট করে। ক্ষয়পূরণের শক্তিকে দুর্বল করে তোলে। এর জেরে সামগ্রিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি, আর্সেনিকের প্রভাবে ত্বকের ক্যানসার এবং ব্ল্যাকফুট ডিজিজের মতো রোগ হতে পারে। তবে এখন দেখার বিষয়, সাধারণ মানুষ এই প্রযুক্তির কতটা সুবিধা লাভ করতে পারে।