অরুণ ঝা, ইসলামপুর : চিকিৎসা পরিষেবার নামে চলছে গুন্ডাগিরি। রোগীর পরিজনদের স্ট্রেচার টানতে বাধ্য করা হচ্ছে কেন। এমনকি স্ট্রেচার আবার জায়গামতো পৌঁছে না দিলে মিলছে না গেট পাস। অথচ হাসপাতালের ভিতরে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের কর্মীদের অবাধ স্বাধীনতা মিলছে কীভাবে? তাহলে কী দালাল চক্রের সেটিংই শেষ কথা? উত্তরবঙ্গ সংবাদের স্টিংয়ে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালের ভিতর চলা এই বেআইনি কারবারের সত্যতা উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, উত্তরবঙ্গের স্টিংয়ের পর হাসপাতাল রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা ইসলামপুর পুরসভার প্রশাসক কানাইয়ালাল আগরওয়াল ঘটনার কথা স্বীকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি কড়া পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ রাত ১ টায় ইসলামপুর হাসপাতালে স্টিং চালায়। করোনার আবহে নির্দেশিকা থাকায় হাসপাতালের ভেতরে ছবি করা সম্ভব হয়নি। তবে হাসপাতালের এক নিরপত্তাকর্মী উত্তরবঙ্গের ক্যামেরায় হাসপাতাল প্রশাসনের তুঘলকি সিদ্ধান্ত সহ ল্যাবের দালাল চক্রের একের পর এক বিষয় থেকে পর্দা তুলতে শুরু করেন। নজিরবিহীন হলেও অমানবিক সত্যি হল, হাসপাতালে স্ট্রেচার টানার লোক নেই। ফলে জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি করার পর রোগীর পরিজনদের স্ট্রেচার টেনে দোতলায় বিভিন্ন বিভাগে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। ঘটনাক্রমের শেষ এখানেই নয়। জরুরি বিভাগ থেকে পরিজনদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে, রোগী রেখে আবার স্ট্রেচার যেন জরুরি বিভাগে পৌঁছে দেওয়া হয়। না হলে পরিজনদের হাসপাতালে ঢোকার গেট পাস দেওয়া হবে না। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, গভীর রাতে এক অসহায় মহিলা একা কোনও রোগী নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছোলে তাঁকেও স্ট্রেচার টানতে বাধ্য করা হচ্ছে বা হবে কোন আইনে? স্ট্রেচার সঠিক স্থানে না পৌঁছোলে গেট পাস না দেওয়ার হুমকি গুন্ডাগিরি নয়?
একই সঙ্গে হাসপাতালের ভিতরে বেসরকারি ল্যাবেরকর্মীদের ২৪ ঘণ্টা অবাধ যাতায়াতের চিত্রও উত্তরবঙ্গ সংবাদের স্টিংয়ে উঠে এসেছে। কিছুক্ষেত্রে চিকিৎসকদের একাংশের সঙ্গে ওই ল্যাবকর্মীরা হাসপাতালে ঘুরঘুর করেন বলেও অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গিয়েছে, সবটাই সেটিং ব্যবস্থার মাধ্যমে চলছে। নিরাপত্তাকর্মী পরিষ্কার জানিয়েছেন, হাসপাতাল প্রশাসন একবার নির্দেশ দিলে দালাল চক্রের হাসপাতালে ঢোকা আমরা বন্ধ করে দেব। কিন্তু কেউ কিছু বলে না। ফলে আমরাও সব জেনে দর্শক সেজে থাকি। প্রসঙ্গত, বেসরকারি ল্যাবের দালাল চক্রের ওপর হাসপাতাল প্রশাসনের একাংশের উদারহস্ত হওয়ার পিছনে মোটা টাকার খেলা রয়েছে বলেও অন্তর্তদন্তে জানা গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানতে হাসপাতাল সুপার ডাঃ নারায়ণ মিদ্যাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, রোগীর পরিজনদের গেটপাসের জন্য ধমকে স্ট্রেচার টানতে বাধ্য করা বেআইনি। এটা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। সঙ্গে আমি নিজেও দেখেছি হাসপাতালের ভিতরে বেআইনিভাবে বেসরকারি ল্যাবের লোকজন সব সময় সক্রিয়। হাসপাতাল সুপারের নজর রাখা উচিত। আমি শীঘ্রই এই অমানবিক এবং বেআইনি কাজ বন্ধ করার জন্য কড়া পদক্ষেপ করব।