নিউজ ব্যুরো: শুধু এই সংকটের সময় নয়, বছরের প্রতিটি দিন পাঠকের স্বার্থ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রতি আমরা দায়বদ্ধ। আমরা জানি, পাঠকই আমাদের শক্তি, পাঠককে কেন্দ্র করেই আমাদের যাবতীয় কার্যকলাপ। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে ভুয়ো প্রচার শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, সংবাদপত্রের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ায়। তাই সংবাদপত্র পড়া যাবে না, স্পর্শ করা যাবে না। কিন্তু এটা নিছকই গুজব, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব। মিথ্যা প্রচার। যাঁরা পাঠকদের অন্ধকারে রাখতে চান, তথ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চান, তাঁরাই এমন প্রচার করছেন।
কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার সংবাদপত্র সহ গোটা সংবাদমাধ্যমকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পরিষেবার তালিকায় রেখেছে। সংবাদপত্র থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিত না। প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী আলাদা আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এমন সংকটের মুহূর্তে মানুষকে সচেতন করতে কেন সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ এবং কেনই বা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে সংবাদপত্রের কোনও বিকল্প নেই। দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, সংবাদপত্রের প্যাকেট থেকে সংক্রমণের কোনও সম্ভাবনা নেই। তা সত্ত্বেও অনেকেই ভুয়ো প্রচারে বিভ্রান্ত হচ্ছেন এবং তাঁদের মনে ভয় থেকেই যাচ্ছে। ফলে সংবাদপত্র বিক্রির প্রক্রিয়ায় তার প্রভাব পড়ছে। অনেক বিক্রেতা সংবাদপত্র বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে আমরা দিনরাত এক করে যে সংবাদপত্র প্রকাশ করছি তা সব পাঠকের কাছে পৌঁছোতে পারছে না।
অতএব আমাদের বিকল্প পথের খোঁজ করতে হয়েছে। যে সব সাংবাদিককে প্রতিদিন মানুষের দুঃখ-কষ্ট-বঞ্চনার খবর জোগাড় করতে ঘুরে বেড়াতে হয়, এখন তাঁদের অন্য ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। রোজ সকালে তাঁরা স্কুটারে অথবা বাইকে চড়ে খবরের কাগজ বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়ছেন। কোথাও তাঁরা সংবাদপত্র বিক্রেতাদের সাহায্য পাচ্ছেন, কোথাও পাচ্ছেন না। কিন্তু পাঠকের সহযোগিতা সর্বত্র। প্রতিদিন সকালে উত্তরবঙ্গ সংবাদ না পাওয়ায় তাঁরা যেমন বিরক্ত, তেমনই সাংবাদিকরা কাগজ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করায় তাঁরা দৃশ্যতই খুশি। কিন্তু এখনও অনেক জায়গায় উত্তরবঙ্গ সংবাদ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেই সব এলাকার পাঠকদের মোবাইলে আমরা ই-পেপার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে ততদিন আমাদের এই উদ্যোগ চলতেই থাকবে। এই কাজ করতে গিযে আমাদের সাংবাদিকদের প্রতিদিন নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। তারই বাছাই করা কিছু অংশ আজ আমরা প্রকাশ করছি।
ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি : এই যে ভাই, কোন কাগজ আছে তোমার কাছে? এমন কথা শোনার অভ্যাস নেই। তাই ৫০ ছুঁইছুঁই গুরুগম্ভীর আওয়াজ শুনে প্রথমে একটু চমকে গিয়েছিলাম। ধাতস্থ হয়ে হাসিমুখে বললাম, উত্তরবঙ্গ সংবাদ। আরও একটু গম্ভীর হযে তিনি বললেন, যা শুরু করেছ তোমরা। একেই ঘরে বসা, তার উপর কাগজ দিচ্ছ না। তাঁকে হাসিমুখেই বললাম, ফোন নম্বর রেখে দিন। প্রয়োজন হলে জানাবেন।
রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি : ৩ দিন পাঠকের কাছে সংবাদপত্র পৌঁছে দিতে গিয়ে বুঝেছি যতই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি হোক না কেন, সংবাদপত্রের কদর এতটুকু কমেনি। মানুষ উৎসাহ নিযে কাগজ কিনছেন। এমনকি অনেকে ৪ টাকার বদলে ৫ টাকাও দিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তায় নেমে কাগজ বিক্রি না করলে এই অভিজ্ঞতা হত না।
শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : ঘুঘুমারি বাজারে কাগজ বিলি করে চলে যাওয়ার মুখে এক বয়স্ক মানুষ ছুটে আসেন। তাঁকে বললাম, আপনি বাইরে বেরোলেন কেন? তিনি বললেন, উত্তরবঙ্গ সংবাদ এসেছে শুনে নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি।
রাহুল দেব, রায়গঞ্জ : বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বললেন, উত্তরবঙ্গ সংবাদ পেলেই হবে। অন্য কিছু লাগবে না। এই কাগজ না পড়লে ফাঁকা ফাঁকা লাগে। একমাত্র তোমাদের সাংবাদিকরাই কাগজ দিচ্ছে। এইজন্যই তোমরা আত্মার আত্মীয়।
অরুণ ঝা, ইসলামপুর : কাগজ পেয়ে আমবাগান কলোনির বাসিন্দা সীমা দাস বলে উঠলেন, কাগজ ছাড়া বাঁচা যায় বলুন তো! রোজ দেবেন তো? হ্যাঁ বলতেই হাঁফ ছাড়লেন। পাঠকের এমন প্রতিক্রিয়া শক্তি জোগায়। আজ ক্ষুধার্তের মতো মানুষকে কাগজ নিতে দেখলাম।
শুভ্রজিৎ বিশ্বাস, মেখলিগঞ্জ : যখন উত্তরবঙ্গ সংবাদ মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছিলাম তখন কেউ বলছিলেন, সকালে চায়ের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ সংবাদ না থাকলে সকালই যেন শুরু হয় না। অনেকে জানালেন উত্তরবঙ্গ সংবাদ-এর সঙ্গে সম্পর্কের নানা গল্প। অনেক পাঠক সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কাগজ পাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
গৌতম সরকার, চ্যাংরাবান্ধা : আজ এক অন্য অনুভূতি। নিজের হাতে কাগজ তুলে দেব ভেবে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আনন্দ হচ্ছিল। শুক্রবার ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠেই বন্ধু ও সহকর্মী রামকৃষ্ণকে ফোন করি। তখনও কাগজ পৌঁছায়নি। অবশেষে রামকৃষ্ণ যখন বলল কাগজ পৌঁছেছে, তখন বাইক নিয়ে বাজারে পৌঁছালাম। প্যাকেট খুলতেই শেষ। বলা যায়, কাগজ নিযে কাড়াকাড়ি। খুব আনন্দ হচ্ছিল।
গৌতম দাস ও পঙ্কজ ঘোষ, গাজোল : আমাদের এখানে যে কয়েকজন এজেন্ট এবং সংবাদপত্র বিক্রেতা রয়েছেন তাঁরা যথেষ্ট সচেতন। খবরের কাগজ থেকে সংক্রমণ ছড়ায়, এমন আজগুবি তত্ত্বে তাঁরা বিশ্বাস করেননি। তাঁদের উৎসাহ দিতে আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও গ্লাভস দিয়েছি। এতে তাঁরা খুব খুশি। তবে শহরাঞ্চলে কাগজ পাওয়া গেলেও গ্রামাঞ্চলে পৌঁছানোয় সমস্যা হচ্ছে। তাই আজ থেকে টোটো করে বিভিন্ন এলাকায় উত্তরবঙ্গ সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। এ ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে।
চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার : শহরের নতুনবাজার এলাকায় কাগজ বিলি করছিলাম। তা দেখে বাজার ফেরত মধ্যবয়সি এক ভদ্রমহিলা ছুটে আসেন। বললেন, একটা কাগজ কি পাওয়া যাবে? কাগজ নেওয়ার পর টাকা দিতে গিয়ে দেখলেন ব্যাগে খুচরো পয়সা নেই। পরে টাকা দেওয়ার কথা বললেও তিনি স্থানীয় একটি দোকান থেকে খুচরো এনে কাগজ নিয়ে গেলেন। বলে গেলেন, গত তিন-চারদিন কাগজ পাচ্ছিলেন না।