প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক মুহূর্তে আরও একটি উল্লেখযোগ্য রদবদল কেন্দ্রীয় সরকারের। মোদি সরকারের ‘ভোকাল ফর লোকাল’ নীতিতে ভর দিয়ে, এ বছর নয়াদিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে দেশে তৈরি সমস্ত অস্ত্রের প্রদর্শন করা হবে। শুধু তাই নয়, প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে ২১ দফা তোপধ্বনিতেও রাতারাতি বদল আনল কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এত দিন ২১ তোপের সেলামি বা ২১ দফা গান স্যালুটে ব্যবহার করা হত ব্রিটিশ জমানার ২৫ পাউন্ডার আর্টিলারি কামান। এবার ওই কামানের বদলে ব্যবহার করা হবে ১০৫ এমএম ইন্ডিয়ান ফিল্ড গান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের দাবি, ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর লক্ষ্যে পুরাতনী ধ্যানধারণা তথা ঔপনিবেশিক মানসিকতা ছেড়ে দেশীয় কামানেই ভরসা রাখছে সরকার। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথমবার ব্রিটিশ ২৫ পাউন্ডার আর্টিলারি কামানকে অপসারিত করে তার জায়গা নিল ‘ভূমিজাত’ ইন্ডিয়ান ফিল্ড গান।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রিটিশ ২৫ পাউন্ডার আর্টিলারি কামানের ইতিহাস সুপ্রাচীন, এটি একটি ব্রিটিশ ফিল্ড গান যা ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়েছে, এমনকি বিভিন্ন গৃহযুদ্ধ চলাকালীন এই ব্রিটিশ কামান তার বাহাদুরি এবং মজবুতি দেখিয়েছে। ১৬৩৩ কেজি ওজনের যন্ত্রটি প্রায় ১৫.২ ফুট লম্বা হয়, যার মধ্যে কামানের মুখ বা নলের দৈর্ঘ্য হল ৮.২ ফুট, কামানের উচ্চতা প্রায় ১০ ফুট ও প্রায় ৭.৫ ফুট চওড়া। ৬ জন মিলে এই কামান চালাতে হতো৷ এই কামান দ্বারা ৮৮x২৯২ মিমি হাই এক্সপ্লোসিভ, এন্টি ট্যাঙ্ক, স্মোক ও উচ্চ দাহ্যশীল বারুদের গোলা দাগা হতো। মিনিটে ৮টি গোলা দাগার ক্ষমতা রাখে ব্রিটিশ ২৫ পাউন্ডার আর্টিলারি কামান, আধা কিমি প্রতি সেকেন্ডের গতিতে গোলা ছুটে গিয়ে শত্রুপক্ষকে বিধ্বস্ত করে দিত। ১৯৪৭ এর ভারত-পাক যুদ্ধে এই কামান ব্যবহার করে ভারত। এর পরবর্তীতে ১৯৬৫, ১৯৭১ এ পাকিস্তান এমনকি ১৯৬৫ তে চিনের সঙ্গে যুদ্ধে এই ব্রিটিশ কামান ব্যবহার করেছে ভারতীয় সেনা।
অন্যদিকে ১৯৭২ সালে আর্মামেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্টের (এআরডিই) উদ্যোগে ভারত প্রথমবার নিজস্ব ফিল্ড গান বানায়। ১৯৮৪ সালে জব্বলপুরের(Jabalpur) গান ক্যারেজ ফ্যাক্টরিতে এই দেশি ফিল্ড গান প্রস্তুত করা শুরু হয়। অন্যদিকে কানপুরের গান অ্যান্ড শেলে নির্মিত হয় এর গোলা। আকারে প্রকারে ব্রিটিশ ২৫ পাউন্ডার আর্টিলারির মতোই এই দেশি কামান, তবে আকারে ছোট, তুলনায় অনেক হালকা যা সহজেই পার্বত্য অঞ্চলে যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করা যায় ও প্রভাবে অনেকবেশি ঘাতক। ভারতীয় ফিল্ড গানের তিনটি ক্যাটিগোরি আছে – এমকে ১, এমকে ২ ও ট্র্যাক মাউন্টেড। মিনিটে ৬টি করে গোলা দাগতে সক্ষম এই কামান এবারই প্রথম ব্যবহৃত হবে ২১ দফা সেলামি দেওয়ার জন্য, প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে৷ ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর লক্ষ্যপূরণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেজর জেনারেল ভবনীশ কুমার।
প্রসঙ্গত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বা কোনও বিশেষ দিবসকে ২১ দফা তোপধ্বনির মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়। ঐতিহাসিকভাবে সামরিক বাহিনীর এই তোপধ্বনির মাধ্যমে সম্মান জানানোর রেওয়াজ রয়েছে। তোপধ্বনির মাধ্যমে সামরিক অভিবাদনের প্রথাটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত। তোপধ্বনির সংখ্যার বিষয়টিও এসেছে ঐতিহাসিকভাবে। এটি ব্যক্তি বা ক্ষেত্রবিশেষে কম-বেশি হয়ে থাকে। ভারতে স্বাধীনতা ও প্রজাতন্ত্র দিবসে ২১ দফা তোপধ্বনির মাধ্যমে অতিথিদের শ্রদ্ধা ও সামরিক অভিবাদন জানানো হয়। দু’টি দিনেই ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়। আবার অন্য কোনও দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান বা আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট কোনও ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে ২১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাপী সামরিক সম্মান জানাতে ২১ বারই তোপধ্বনি করার বিষয়টি জানা যায়। এবছর তা দেওয়া হবে মিশরের রাষ্ট্রপতির সম্মানে।
প্রজাতন্ত্র দিবসের বিশেষ সম্মানীয় অতিথি রূপে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ইতিমধ্যেই দিল্লি পৌঁছেছেন, প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ‘প্রধান অতিথি’র পদ অলংকৃত করবেন তিনি। ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছেছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। বিমানবন্দরে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন মিশরের প্রেসিডেন্ট। বুধবার ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও দেখা করেন সিসি। তাঁর সম্মানে রাষ্ট্রপতি ভবনে দেওয়া হয় বিশেষ গার্ড অফ অনার। ২৪-২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সরকারি সফরে পাঁচ মন্ত্রী ও মিশরের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল তাঁর সঙ্গে রয়েছে। উল্লেখ্য এই প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে মিশরের রাষ্ট্রপতিকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারত ও মিশর চলতি বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৭৫তম বছর উদযাপন করছে। ভারত তার জি-২০ সভাপতিত্বে মিশরকেও ‘অতিথি দেশ’ হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির কর্তব্যপথে অনুষ্ঠিত ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবসের উদযাপন ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সম্মানে ২১ দফা তোপধ্বনি দেবে ১০৫ এমএম ইন্ডিয়ান ফিল্ড গান।
লেটেস্ট খবর জানার জন্য দেখুন www.uttarbangasambad.com এবং ব্রেকিং নিউজ (Breaking News) এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন উত্তরবঙ্গ সংবাদ টিভিতে ।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Instagram পেজ