রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি : কেউ পাথর ভেঙে সংসার চালান, কেউ আবার মুটেমজুরের কাজ করেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে এঁদের প্রত্যেকেই কাজ হারিয়েছেন। ঘরে যেটুকু সঞ্চয় ছিল তাও প্রায় একমাস বসে খেতে খেতে শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে এখন না খেয়ে দিন কাটছে পরিবারগুলির। এমনই অবস্থা মাটিগাড়া ব্লকের পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায়। বহু পরিবারের র্যাশন কার্ড না থাকায় তাঁরা সরকারি সাহায্যও পাচ্ছেন না। বাইরে থেকে কেউ এলাকায় গেলেই তাঁরা ভাবছেন হয়তো তাঁদের জন্য খাবার নিয়ে আসা হয়েছে। শিশু থেকে প্রবীণ সবাই উৎসাহ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন। প্রত্যেকের একটাই কথা, আবার কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে? আমরা আবার কবে দু’পয়সা রোজগার করে তা দিয়ে চাল, ডাল, আলু কিনে খেতে পারব? এর জবাব অবশ্য কিছু দেওয়া যায়নি। কিন্তু মানুষগুলো কেন দুবেলা খেতে পাবে না সেই প্রশ্ন উঠছে। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক সুমন্ত সহায় বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওযার আশ্বাস দিয়েছেন।
পাথরঘাটা অঞ্চলের বানিয়াখারি, ত্রিপালিজোত, নিমাইজোত, জ্যোতিনগর কলোনি, লোকনাথ কলোনি, খালবস্তি সহ আশপাশের এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, বহু মানুষেরই দুবেলা খাবার জুটছে না। এই অঞ্চলের সিংহভাগ পরিবারেই স্বামীরা দিনমজুর হিসাবে কাজ করেন, সংসার টানতে স্ত্রীরাও বালাসন নদী থেকে পাথর তোলেন এবং তা ভাঙার কাজ করেন। দুজনের যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলেপুলে নিয়ে সংসার চালান। লকডাউনের জেরে গত ২২ মার্চ থেকেই তাঁদের সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ। ফলে রোজগারও বন্ধ হয়ে রয়েছে। ঘরে বসে বসে একমাস ধরে সংসার চালাতে গিয়ে ভাঁড়ার শূন্য হয়ে পড়েছে। র্যাশন কার্ড না থাকায় তাঁরা সরকারি ভরতুকিতে চাল, আটাও পাচ্ছেন না। ফলে সমস্যায় পড়েছেন বাসিন্দারা। জ্যোতিনগর কলোনির বাসিন্দা মন্টু রায়, মণি মোহন্ত, ত্রিপালিজোতের বাসিন্দা সুভাষ বর্মন, প্রসেনজিৎ রায় সহ অন্যরা বলেন, নদীতে পাথর ভেঙে অথবা সিমেন্টের দোকানে গাড়িতে বস্তা ওঠানো, নামানোর কাজ করে সংসার চালাতাম। কিন্তু একমাস ধরে কাজ বন্ধ। ঘরে যেটুকু টাকাপয়সা জমানো ছিল তা দিয়ে চাল, ডাল কিনে খেয়েছি। এখন আর খাবার জুটছে না। আমাদের র্যাশন কার্ডও নেই। ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে। সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মাটিগাড়া ব্লক (২) সভাপতি খগেশ্বর রায়। তিনি বলেন, আমার কাছে কয়েক হাজার এমন মানুষের নামের তালিকা রয়েছে, যাঁদের র্যাশন কার্ড নেই। এই মানুষগুলো এখন দুবেলা ঠিকঠাক খাবার পাচ্ছেন না। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনও কোনও এলাকায় প্রতিদিনই চাল, আলু, সয়াবিন পৌঁছে দিচ্ছি। আবার খিচুড়ি বানিয়ে খাওযাচ্ছি। তবে, গোটা পঞ্চায়েত এলাকায় আমার পক্ষে প্রতিদিন পেঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসন উদ্যোগ না নিলে এই মানুষগুলোর মুখে খাবার উঠবে না।
শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক সুমন্ত সহায় বলেন, আবেদন করেও যাঁরা র্যাশন কার্ড হাতে পাননি তাঁদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু যাঁরা কার্ডের আবেদনই করেননি তাঁদের জন্য কোনও নির্দেশিকা আমাদের কাছে নেই। এই বাসিন্দাদের কীভাবে চিহ্নিত করা হবে? এই সময় তো গ্রামে গ্রামে গিয়ে সমীক্ষা করারও উপায় নেই। তবুও ওই মানুষগুলোকে কোনওভাবে খাবার দেওয়া যায় কি না সেই চেষ্টা করছি।