নাগরাকাটাঃ ফিরলেন শহিদ শঙ্কর। তবে কফিন বন্দী নিথর হয়ে। তাঁকে শেষ বিদায় জানালেন ডুয়ার্সের কয়েক হাজার জনতা। কে নেই তাতে। তাবড় মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ, সেনা, চা শ্রমিক, আটপৌঢ়ে গৃহবধূ, ছাত্র, যুবক এমনকি শিশুরাও। গোর্খা রাইফেলসের বীর জওয়ানের শেষ কৃত্য যেন মিলিয়ে দিল রাজনীতির সমস্ত রঙকেও। এমন কোন মানুষ নেই যিনি এক ফোঁটা হলেও চোখের জল ফেললেন না ৩০ বছরের যুবকের জন্য। হয়ত জীবনের সার্থকতা এটাই। দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়ে নাগরাকাটার মংরুপাড়ার ওই অকুতোভয় সেনা যে অমর হয়ে থাকলেন তা নিয়ে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই।
শনিবার বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে সড়ক পথে কফিনবন্দী দেহ ফিরল মনিপুর ধসে (Manipur Landslide) নিহত সেনা শঙ্করের দেহ। বিকেল সাড়ে ৩ টে নাগাদ তাঁর দেহ ফেরে নাগরাকাটার মংরুপাড়ায়। ফেরার পথে বাগ্রাকোট, ওদলাবাড়ি, মালবাজার, চালসা, মহাবাড়ি এলাকায় শহীদ এই জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অগনিত মানুষ। দেহ যত তাঁর বাড়ির দিকে এগিয়েছে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শববাহী অ্যাম্বুলেন্সের সাথে বাইকে করে আসা মানুষের সংখ্যা।
নাগরাকাটার মংরুপাড়ার তাঁর বাড়িতে দেহ আসার পরই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তাঁর বছর পঁচিশের স্ত্রী পুনম, অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা ধোজ বাহাদুর ও মা কৌশিলাদেবী। ৫ বছরের একমাত্র কন্যা সিয়ানার চোখমুখে তখন এমন পরিবেশ দেখে শুধুই বিহ্বলতা। শহীদ এই জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মংরুপাড়া এলাকায় ভিড় জমায় শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। এরপর শঙ্করকে নিয়ে যাওয়া হয় কাছের সরকারী প্রাথমিক স্কুলের মাঠে। সেখানে ভিড় সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশকে। বিউগল বাজিয়ে সামরিক মর্যাদায় সেনার পক্ষ থেকে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেসময় স্বামীকে শেষ বারের জন্য স্যালুট করছেন কোনক্রমে কান্না চেপে রাখা স্ত্রী পুনম। যা দেখে চোখে জল ধরে রাখতে পারেনি কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই মন্ত্রী জন বারলা ও বুলু চিকবরাইক। এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বারলা বলেন, এর থেকে বড় শোক আর কিই বা হতে পারে। দেশের জন্য শহিদ হওয়া শঙ্করের পরিবারের পাশে রয়েছি। রাজ্যের মন্ত্রী বুলু চিকবরাইক বলেন, অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। প্রত্যেকেই মর্মাহত। পরিবারটির পাশে সর্বোতভাবে থাকবো। শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন নাগরাকাটার বিধায়ক পুনা ভেংরা, মালবাজারের এসডিপিও রবীন থাপা সহ পুলিশের পদস্ত কর্তারা।শেষে মংরুপাড়ার স্কুলের মাঠ থেকে দেহ নিয়ে নাগরাকাটা শহর পরিক্রমা করে শেষ কৃত্য সম্পন্ন হয় জলঢাকা নদীর ঘাটে। সূর্য ততক্ষনে পশ্চিমে ঢলে পড়েছে।
অগাস্টেই ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল শঙ্করের। ফিরলেন অকালেই। তবে শেষ বারের জন্য। মণিপুরের নানে জেলায় বিধ্বংসী ধসে শঙ্করের পার্থিব শরীরটুকুই এদিন চির বিদায় নিয়েছে। তবে মানুষের মনে তাঁর স্মৃতি যে অম্লান হয়ে থাকল তা এদিনের বাঁধভাঙা আবেগেই পরিষ্কার। আসলে শহিদের তো মৃত্যু হয় না। শঙ্কররা বরাবরই মৃত্যুঞ্জয়ী।
আরও পড়ুন : বাগডোগরায় এল ১১ সেনার দেহ, সামরিক মর্যাদায় শেষ শ্রদ্ধা শহিদদের