নকশালবাড়ি: আদিবাসীদের জমি হাতবদল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল হাতিঘিসার সেবদোল্লাজোতে। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আদিবাসীদের জমি অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টাকায় চলছে এই লেনদেন। মুনাফা লুটছে জমির দালালরা। শেষপর্যন্ত তিনজন জমির কারবারির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন এরকমই একটি জমির মালিক। বিষয়টি জানাজানি হতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনও। ইতিমধ্যেই এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু প্রশাসনের নজর এড়িয়ে আদিবাসীদের জমি কীভাবে আদিবাসী নন এমন ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি হয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দুঃস্থ আদিবাসীদের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জমি কেনাবেচা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পরে সেই জমির রেকর্ডও হস্তান্তর হয়ে যাচ্ছে।
বছরখানেক আগে মাটিগাড়া সুকনা চা বাগানের বাসিন্দা আরসেলয়ান টোপ্নো হাতিঘিসা সেবদোল্লা মৌজায় ৪৭.৭০ শতক জমি কেনেন মানসা ওরাওঁয়ের কাছে। এরপর তিনি মাটিগাড়ায় চলে যান। পাচ মাস পরে এসে দেখেন তাঁর জমি প্লটিং করে উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকজন ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। তিনি বাধা দিতে গেলেই অবৈধভাবে হাতবদলের ঘটনা সামনে আসে। নকশালবাড়ি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, ৪৭.৭০ শতক জমির মধ্যে ২০.৬৭ শতক জমি নকশালবাড়ির বাসিন্দা সুশীল ঘোষ, পানিয়া শিং, গোঁসাইপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় মিত্র, গ্যাংটকের বাসিন্দা মহেশ ছেত্রীর নামে রেকর্ড হয়ে গিয়েছে। তাঁর অজান্তেই আদিবাসী জমি কিভাবে অন্য সম্প্রদায়ের ব্যক্তির হাতে নথিভুক্ত হল, তা জানতে আরসেলয়ান ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে জানা যায় সঞ্জয় মিত্র, সুশীল ঘোষ, পানিয়া সিং নকল দলিল দিয়ে গ্যাংটকের বাসিন্দা মহেশ ছেত্রীর কাছে জমি বিক্রি করে দেন। ভূমি দপ্তর তড়িঘড়ি শুনানি ডেকে ১ এপ্রিল সংশোধনী আদেশনামা জারি করে। আরসেলয়ান টোপ্নো গোটা বিষয়টি নিয়ে সুশীল ঘোষ, পানিয়া সিং, সঞ্জয় মিত্রের বিরুদ্ধে নকশালবাড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে সাতদিনের জন্য পুলিশ হেপাজতে পাঠিয়েছে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালত। বাকিদের খোঁজেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
কিন্তু এমন ঘটনা একটি নয়। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকদের একাংশের মদতে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বহু আদিবাসীর জমি এভাবেই অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের নামে রেকর্ড করে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নকশালবাড়ির বিডিও অরিন্দম মণ্ডল বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এই ঘটনায় দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক, জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সিপিআই(এমএল)-এর কানু সান্যালপন্থী সংগঠনের নেতা দীপু হালদার। তিনি গোটা ঘটনায় তদন্তের দাবি জানিয়ে জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাজের জন্য পঞ্চায়েত প্রধানের থেকে জমির মালিকদের পরিবারের তালিকা সহ তথ্য দিতে হয়। সেই তালিকাও নকল করে জমি মাফিয়ারা রেজিস্ট্রেশন করাচ্ছে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর সূত্রে খবর, রেজিস্ট্রি অফিসকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। কোনও জমি রেজিস্ট্রি করার আগে সেই এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানের দেওয়া তথ্য ঠিক কিনা, তা জানতে হবে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি কমতে পারে।
আরও পড়ুন : নিষিদ্ধ কাফ সিরাপ সহ সিআইডির জালে পাচারকারী