সানি সরকার, শিলিগুড়ি: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)র নির্দেশিকায় বিপাকে পড়েছে রেল। কোভিড১৯ মোকাবিলায় বড় স্টেশনগুলিতে টানেল তৈরি করা হলেও, তা যে জলে গেল বুঝতে পারছেন রেলকর্তারা। করোনা মোকাবিলায় যাত্রী সুরক্ষার পথ কী, নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে তাঁদের।
যাত্রীদের স্যানিটাইজ করার জন্য রেলের তরফে নিউ জলপাইগুড়ি সহ বিভিন্ন বড় স্টেশনে যে টানেল তৈরি করা হয়েছে, তাতে ব্যবহার হত সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড। কিন্তু তা চর্মরোগের ক্ষেত্রে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে করোনা আক্রান্ত প্রত্যেকটি দেশকে সতর্ক করে দিয়েছে হু। আর তাতে সমস্যায় পড়েছে রেলও।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন চন্দ বলেন, হুর নতুন নির্দেশিকা আমরাও পেয়েছি। বুঝতে পারছি টানেলগুলি আর ব্যবহার করা যাবে না। হুর নতুন নির্দেশিকা এলে রেল বোর্ড সুরক্ষার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে।
দেশজুড়ে লকডাউন চলায় অন্যান্য পরিবহণের সঙ্গে স্তব্ধ রেলের চাকাও। কিন্তু লকডাউন প্রত্যাহার হলেই যাত্রী পরিবহণে চাপ পড়বে এবং এরফলে নতুন করে করোনার প্রভাব বিস্তার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যৎ সুরক্ষা ভাবনায় বড় বড় স্টেশনগুলিতে স্যানিটাইজ টানেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। যেমন নিউ জলপাইগুড়ি বা এনজেপি স্টেশনের ভিতরে ঢোকার মুখেও গত কয়েকদিন ধরে তৈরি করা হয়েছে এমন একটি টানেল। ১৪ মিটার লম্বা এবং ৭ মিটার চওড়া টানেলটির মধ্যে দিযে যেতে প্রত্যেক যাত্রীর সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ সেকেন্ড। এই সময়ে মধ্যে প্রত্যেক যাত্রী স্যানিটাইজ হয়ে যেতেন বলে বক্তব্য ছিল রেলকর্তাদের। তাঁরা আশাবাদী ছিলেন, স্যানিটাইজ হওয়া যাত্রী ট্রেনে উঠলে কোভিড১৯ এর সংক্রমণ রোধ করা যেমন সম্ভব হবে, তেমনই যাত্রীদের নিরাপত্তার সফরও সুনিশ্চিত হবে। টানেল যাতে সর্বদা কার্যকর থাকে তার জন্য বিশেষ জলাধারও তৈরি করা হয়েছিল উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে। জলের সঙ্গে সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইডের মিশ্রণের জন্য প্রত্যেকটি টানেলে বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের টানেলটি পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য রেল বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু টানেলগুলি যে ব্যবহার করা যাবে না, তা রেল বোর্ডের তরফে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলকে। হুর নতুন নির্দেশিকার কথাও রেল বোর্ডের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে সুরক্ষাপরিকল্পনা বানচাল হয়ে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রেলকর্তাদের কপালে। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের এক কর্তা বলেন, আপাতত এখন আর আমরা কোনও পরিকল্পনাই নিচ্ছি না। লকডাউন আপাতত ৩ মে পর্যন্ত চলবে। ফলে হাতে অনেকটাই সময়। এর মধ্যে নিশ্চয় হু নির্দিষ্টভাবে কিছু নির্দেশিকা দেবে এবং সেই মোতাবেক রেল বোর্ড নির্দেশ জারি করবে। ওই নির্দেশিকা বা নির্দেশের ওপরই নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
এদিকে, টানেল পরিকল্পনা জলে গেলেও কর্মীদের সুরক্ষার জন্য রেল নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। যে সমস্ত রেলকর্মীকে পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে হচ্ছে, ওয়ার্কশপে কাজ করতে হচ্ছে বা বাইরে যেতে হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে তাঁদের জন্য নিজস্ব উদ্যোগে পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। চলতি মাসেই তৈরি করা হচ্ছে ৩০ হাজার পিপিই। যার মধ্যে কিছু তৈরি করাও হয়েছে। মে মাসে তৈরি করা হবে আরও এক লক্ষ পিপিই। শুভাননবাবু বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রেলকর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।