মালদা: তাঁর স্যাক্সোফোনের সুর ইতিমধ্যেই মন কেড়েছে মালদার মানুষের। এবার নিজের ওয়ার্ডের মানুষের মন পেতে পুরভোট ময়দানে মীরচকের মেয়ে সাদিয়া। শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী এই স্যাক্সোফোন শিল্পী। প্রপিতামহ লাল মহম্মদ ছিলেন উচ্চাঙ্গসংগীত বিশারদ। নেপালের রাজদরবারে সংগীত পরিবেশন করে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। এছাড়াও বিষহরি গম্ভীরার মতো গানেও দক্ষতা ছিল। যাত্রাদলের গান পরিবেশনা এমনকি আলকাপ দলের খলিফাও ছিলেন উত্তরপ্রদেশের বেনারসের বাসিন্দা লাল মহম্মদ। পরবর্তীতে বাংলায় চলে আসেন সপরিবারে। প্রথমে মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুর, পরে মালদা শহরের মীরচক এলাকায় বসবাস শুরু করেন। উচ্চাঙ্গসংগীতে রোজগার ছিল না বলে বিয়ে বাড়ির বাজনার দল গড়ে তোলেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মীরচক এলাকার একটা অংশ ঢুলিপাড়া নামে বিখ্যাত হয়। লাল মহম্মদের ছেলে মহম্মদ ইলিয়াসও ছিলেন বাবার সু্যোগ্য সন্তান। তিনিও উত্তরবঙ্গের একমাত্র সানাইবাদক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ইলিয়াসের ছেলে মহম্মদ সফি অবশ্য ওয়েস্টার্ন মিউজিকে আগ্রহ দেখান। তিনি সানাইয়ের বদলে হাতে তুলে নেন স্যাক্সোফোন। তবে উত্তরসুরি হিসেবে সফির কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তার দুই মেয়ে। সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়েরা সচরাচর সংগীত চর্চায় যাবে তা কিছুটা হলেও অবিশ্বাস্য। যদিও সেই ধারা ইদানীং কালে বদলেছে। সফির ছোট মেয়ে সাদিয়া আগ্রহ দেখায় স্যাক্সোফোনে। বাবা মেয়ের আগ্রহ দেখে ধর্মীয় গোঁড়ামিকে পাশে রেখে স্যাক্সোফোন হাতে তুলে দেন মেয়ের হাতে। নিয়মিত রেয়াজ করতে করতে আজ সাদিয়াও মালদা শহরবাসীর কাছে পরিচিত মুখ। বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক আসছে তার। তাঁর স্বপ্ন, সংগীত জগতে লাল মহম্মদ ও দাদু ইলিয়াসের মতো খ্যাতি অর্জন করবে একদিন। এর পাশাপাশি আরেকটাও স্বপ্ন মনের ভেতর লালন করছে সাদিয়ার। তা হল জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে মানুষের সেবা করার। কিন্তু কোনও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না হয়ে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী হিসেবে ঢোল প্রতীক নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন তিনি। সাদিয়ার লড়াই তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস আর বামফ্রন্টের হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সুরের জগত থেকে একলাফে রাজনীতির মঞ্চে উঠে পড়েছে সাদিয়া। পথ কঠিন হলেও ভেঙে পড়ার মেয়ে নন তিনি। বরং আত্মবিশ্বাস জোরদার করেই নতুন লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে সাদিয়া।
আরও পড়ুনঃ গোঁজ প্রার্থীদের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ ফিরহাদের