উত্তরবঙ্গ ব্যুরো: জেলায় জেলায় কালবৈশাখীর দাপটে তছনছ ঘর-বাড়ি, ফসল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হতেই শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি। ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে একাধিক জেলার বাসিন্দারা। রায়গঞ্জে ১৫০-২০০টির বেশি বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও বড় বড় গাছ ভেঙে পড়েছে, কোথাও আবার ইলেকট্রিক পোল ভেঙে পড়ায় রাত থেকেই বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শুক্রবার সকালে জনপ্রতিনিধিরা গ্রামগুলি পরিদর্শন করেন এবং গ্রামবাসীদের কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় তা নিয়ে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। মাড়াইকুড়া এবং গৌরি গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করেন পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ আলতাব হোসেন। তিনি বলেন, ‘গতকালের ঝড়ে এলাকায় খুবই ক্ষতি হয়েছে। এরকম ঝড় অনেক বছর পর হল।‘ মাড়াইকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কমল দেবশর্মা বলেন, ‘আজ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।‘
অন্যদিকে, গতকাল রাতের বিধ্বংসী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পতিরামের কুমারগঞ্জ ব্লকের প্রায় সর্বত্র। গাছপালা ভেঙে পড়া, বাড়ি ঘরের চাল উড়ে যাওয়া, বিদ্যুতের পোল পড়ে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো বহু ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ, প্রশাসন ও বন বিভাগের উদ্যোগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাতেই সে সমস্ত গাছ কেটে সরিয়ে নিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। সকাল থেকে কুমারগঞ্জের বিডিও বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল বিতরণ করেন। মাঝিয়ান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের নোডাল অফিসার ডঃ জ্যোতির্ময় কারফর্মা বলেন, ‘গতকাল রাতে আধঘণ্টা ধরে সর্বোচ্চ ৬২ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় আছড়ে পড়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন অংশে। এই ঝড়ের গড় গতিবেগ ছিল জেলাজুড়ে ৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ফলে জেলার বিভিন্ন জায়গায় কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।‘ কুমারগঞ্জের বিডিও ছেওয়াং তামাং বলেন, ‘আমি গতকাল রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখলাম। খুব বড় ধরনের কোনও ক্ষতি হয়নি।‘
পাশাপাশি কালবৈশাখীর দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গেল গঙ্গারামপুর ব্লকের বিস্তৃর্ন এলাকা। একজন আহত হয়েছেন বলে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে। এদিন গঙ্গারামপুরের বিডিও দাওয়া শেরপা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির হাতে ত্রিপল ও খাবার তুলে দেন।
কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উত্তর মালদার বহু গ্রাম লন্ডভন্ড হয়েছে। সব খুঁইয়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছে গৃহহীনরা। বাড়িঘর ভেঙে বেশ কয়েকজন জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এলাকায়। পাশাপাশি বন্ধ পানীয়জল পরিষেবাও। এদিন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান রেজাউল খান। তিনি সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে যান চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ। বিধায়ক বলেন, ‘খবর পেয়ে গ্রামগুলিতে পৌঁছেছি। সবথেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে ভগবানপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেউ আটকাতে পারে না। সবাইকে পাশে থেকে এর মোকাবিলা করতে হবে। আমি নিজের তহবিল থেকে ত্রিপল, পোশাক ও শুকনো খাবার দুর্গতদের হাতে তুলে দিয়েছি। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি রাজ্যস্তরেও জানানো হবে বলে।‘
ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইটাহার ব্লকের ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশকিছু গ্রামে। উড়ে গিয়েছে বহু বাড়ির টিনের চাল। গাছ ও গোয়ালঘর চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে গবাদি পশুর। ঝড়ের তাণ্ডব সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে পতিরাজপুর অঞ্চলের মুরালিপুকুর, সাহাভিটা, দীঘলডাঙা, গোয়ালপাড়া গ্রামে। এদিন সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলি পরিদর্শনে বের হন ইটাহারের বিডিও অমিত বিশ্বাস। ইটাগারের বিধায়ক মোশারফ হুসেনও পরিদর্শনের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন ও উপযুক্ত সরকারি সাহায্যের আশ্বাস দেন।
ঝড়, বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাতে বংশীহারী ব্রজবল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জোড়দিঘি এলাকা ও এলাহাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশকিছু এলাকায় গাছের ডাল ও বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গিয়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের পর গতকাল রাতেই ডিএমডিসি মনোতোষ মণ্ডল এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন। রাতেই রাজ্য সড়কে পড়ে যাওয়া গাছগুলি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রবল কালবৈশাখীর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বিভিন্ন জায়গায় আমবাগানের গাছ ভেঙে পড়েছে। ভালুকা রতুয়া রাজ্য সড়কে বিভিন্ন গাছ পড়ে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে ইলেকট্রিক খুঁটি। কার্যত অন্ধকারে ডুবে রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকা অঞ্চল সহ একাধিক এলাকায়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান ভালুকা ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ঝোটন প্রসাদ। তিনি জানান, এই ঝড়ের ফলে এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফাঁড়ির বিভিন্ন ভবনের চাল উড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন : মাটি চুরির খবর করায় রোষের মুখে উত্তরবঙ্গ সংবাদ, বেধড়ক মার সাংবাদিককে