রামকৃষ্ণ বর্মন, জামালদহ: দৌড়ে রাজ্য সেরা অভাবী খুদে খেলোয়াড় রত্না বর্মনের পাশে দাঁড়ালেন জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার শিবশঙ্কর পাল।
তাঁর উদ্যোগে মঙ্গলবার রত্নার বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, গ্রামের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড় সাইয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যাতে সুযোগ পায়, সে ব্যাপারেও তিনি উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন। শিবশঙ্করবাবু এদিন রত্না বর্মন ও তার পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, খুদে এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের পাশে দাঁড়ানোটা আমাদের নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করি। রত্নার সঙ্গে কথা হয়েছে। ও সাইয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হতে ইচ্ছুক। লকডাউনের পরে এই নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
লকডাউনের জেরে চরম দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছিল রত্না বর্মনের পরিবার। সোমবার উত্তরবঙ্গ সংবাদ-এর পোর্টালে তাঁদের এই দুরবস্থার খবর প্রকাশিত হয়। তারপর থেকেই নানা মহল থেকে রত্নাকে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। সোম ও মঙ্গলবার এই দুদিন মিলিয়ে একাধিক সংস্থা ও ব্যক্তির তরফে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে।
কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের উছলপুকুরি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা রত্নার পরিবারকে মেখলিগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায় প্রধানও বেশ কিছু ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছেন। ডিওয়াইএফআই-এর জামালদহ সংগঠনের তরফেও খাদ্যদ্রব্য দেওয়া হয় তাঁদের। রঞ্জিত রায় মাঝি, গৌতম বর্মন সহ এলাকার বেশ কয়েকজন প্রাথমিক শিক্ষক পঞ্চাশ কেজি চাল সহ নানা খাদ্যসামগ্রী রত্নাদের বাড়িতে দিয়ে আসেন। কোচবিহার জেলা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্মকর্তা বিষ্ণুব্রত বর্মন ও সুব্রত দত্ত দুজনেই রত্নার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন ও সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রত্না ২০১৯ সালে কলকাতার সাইয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত রাজ্য স্তরের এক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিজের বিভাগে ১০০ মিটার দৌড়ে রাজ্য সেরা নির্বাচিত হয়। হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এই খেলোয়াড়ের কৃতিত্বে তখনকার মত গর্বিত হয়ে ওঠে গোটা কোচবিহার জেলা। প্রচুর সন্মান ও সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু ধীরে ধীরে সব ফিকে হতে শুরু করে।
পরিবারে এতটাই অভাব দেখা দেয় যে, পরিচারিকার কাজ করতে মা মিনতি বর্মন পাড়ি দিয়েছেন দিল্লিতে। লকডাউনের জেরে এখন সেখানেই তিনি আটকে রয়েছেন। দিদিমা সুনতি বর্মনের কাছে পিতৃহারা রত্না ও তার দিদি অর্পিতাকে রেখে তিনি দিল্লি চলে গিয়েছিলেন। বছর দশেক আগে স্বামী যতীন বর্মন মারা গিয়েছেন। তারপর থেকেই সংসারের হাল ধরেছেন নমিতাদেবী। এদিন দিল্লি থেকে মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, এই দুর্দিনে আমাদের পাশে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।