দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: বন্ধই হয়ে গেল রায়গঞ্জে কেন্দ্রীয় সরকারের রেশম বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি। ২০২০ সালে কোভিড পরিস্থিতি শুরু হতেই এখানে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সাল থেকে এখানকার স্থায়ী কর্মীদের ধীরে ধীরে অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করে দপ্তর। কেন্দ্রীয় সিল্ক বোর্ডের বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটির ভবন ও আবাসন এখন ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে চারিদিক। দিন-রাত মিলে শুধু দু’জন কর্মী পাহাড়ায় রয়েছেন। এভাবে চুপিসারে উৎপাদন বন্ধ করে কর্মীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। অনেকে এজন্য রায়গঞ্জের বর্তমান সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীকে দায়ী করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা বিজেপি নেতা প্রদীপ সরকার বলেন, ‘এভাবে এই দপ্তর বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় দু’শো অস্থায়ী কর্মীর কাজ চলে গিয়েছে। শুনেছি, আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চারবার সাংসদকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক নলিনাক্ষ পাল জানান, প্রায় দু’বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ। এক বছর হল দপ্তর বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে সাংসদের সদর্থক ভূমিকা নেওয়া উচিত। দপ্তরের উলটোদিকে বাড়ি দিবাকর মণ্ডলের। তিনিও জানান, এই এলাকা দু’বছর হল ভুতের বাড়ি হয়ে আছে। সাংসদকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রেশমের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ১৯৯২ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের সিল্ক বোর্ড রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগরে জাতীয় সড়কের পাশে প্রায় ১০ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলে রেশম বীজ উৎপাদন কেন্দ্র। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ঝাঁ চকচকে অফিস, ওয়ার্কশপ ও কর্মীদের আবাসন গড়ে তোলা হয়। স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় দু’শো কর্মী কাজ করতেন। গুটি থেকে বীজ উৎপাদন করে তা বাজারজাত করা হতো। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই বীজ রেশম চাষের জন্য পাঠানো হতো। শনিবার রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরিকালচার বিভাগের দুই অধ্যাপক ডঃ অমিত মণ্ডল ও ডঃ দেবজয় ভট্টাচার্য গবেষণার কাজে সিল্ক বোর্ডের উৎপাদন কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারেন এখানকার দপ্তর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর ফলে আগামীদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বড় সমস্যায় পড়বেন বলে মনে করছেন তাঁরা। সিল্ক বোর্ডের বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের একমাত্র কর্মী মহাবীর দাস বলেন, ‘করোনা মহামারীর সময় থেকে এখানে বীজ উৎপাদন পুরোপুরিভাবে বন্ধ। গত বছর থেকে স্থায়ী কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্থায়ী কর্মীরা সাংসদকে জানিয়েছেন শুনেছি। আমাদের কী করার আছে?’ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা সিল্ক বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছি। কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্প, একবার সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে তা আটকানো কঠিন, তবুও আমি জানিয়েছি। রায়গঞ্জে যেহেতু সিল্ক উৎপাদন নেই তাই হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাকে জানিয়েছেন অনেকে, দেখছি কিছু করা যায় কিনা।’
আরও পড়ুন : হামলার ঘটনায় ধৃত তৃণমূল নেতার ৩ দিনের পুলিশ হেপাজত