সুবীর মহন্ত, বালুরঘাট : অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তির অপেক্ষায় বালুরঘাট কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ছয় বন্দি আবাসিক। তবে পুরোপুরি মুক্তি নয়, এই প্রথম মুক্ত সংশোধনাগারে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন বালুরঘাট সংশোধনাগারের বন্দিরা। ভয়ংকর অপরাধ করে একদিন আদালতের বিচারে যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছিলেন যাঁরা। জেলের ভেতরে থাকতে থাকতে অপরাধীরা ধীরে ধীরে নিজেদের বদলে ফেলেন। অপরাধপ্রবণতা ভুলে ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেন। এইসব দণ্ডিত অপরাধীদের সুস্থ জীবনে ফেরানোর জন্য রাজ্যে রয়েছে চারটি মুক্ত সংশোধনাগার। এবারে ওই মুক্ত সংশোধনাগারে যাওয়ার সুযোগ পাবে বালুরঘাটের বন্দিরা। বালুরঘাট জেলের ১৪ জন বন্দি মুক্ত জেলে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে আবেদন করেন। ছয়জন প্রশাসনিক ইন্টারভিউতে পাস করেন। এবারে তাঁরা রাজ্য কারা দপ্তরের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছেন। ওই অনুমতি মিললেই মুক্ত সংশোধনাগারে যাওয়ার সুযোগ পাবেন ছয় বন্দি।
জেল বলতে যেমন অন্ধকার কারাগারের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে, মুক্ত সংশোধনাগার কিন্তু তা নয়। তার থেকে বেশ খানিকটা আলাদা। গাছপালা, ঘরবাড়ি নিয়ে একটা ঘেরা জায়গা। অবশ্যই সংরক্ষিত। সেখানে সাজাপ্রাপ্তরা বন্দি থাকেন না। ওই সংরক্ষিত এলাকায় ঘুরে ফিরে বেড়াতে পারে। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বাইরেও বেরোতে পারেন। সংশোধনাগারে যেসব সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে সুস্থ জীবনে ফেরার চেষ্টা করেন, তাদেরই ঠাঁই হয় এই মুক্ত সংশোধনাগারে। রাজ্যে লালগোলা, মেদিনীপুর, রায়গঞ্জ ও দুর্গাপুরে রয়েছে মুক্ত সংশোধনাগার। এতদিন মূলত এইসব এলাকার কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারগুলি থেকে বন্দিদের এই মুক্ত সংশোধনাগারে থাকার সুযোগ মিলত। কিন্তু এবারে বালুরঘাট কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দিরাও এই মুক্ত সংশোধনাগারগুলিতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এই সংশোধনাগারে গেলে পরে বন্দিরা সকাল ছয়টা থেকে রাত্রি আটটা পর্যন্ত বাইরে থাকার সুযোগ পাবে। প্রথম তিনমাস সরকারি খরচে খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি পেলেও, তিন মাস পর থেকে কিন্তু নিজেদেরই রোজগার করে খেতে হবে এই বন্দিদের। সমাজে মিশে থেকে তাদের পরিশ্রম করে রোজগার করতে হবে।
এই মুক্ত সংশোধনাগারগুলিতে যেতে বন্দিদের বেশ কিছু শর্ত মানতে হয়। খুন বা ধর্ষণ করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা সংশোধনাগারে অন্তত ১০ বছর কাটিয়ে তাদের রেকর্ড ভালো থাকতে হবে এবং এই বন্দিদের অবশ্যই বিবাহিত হতে হবে। তবেই তারা মুক্ত সংশোধনাগারে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। বালুরঘাট কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপার অশোক চক্রবর্তী বলেন, এই প্রথম এই সংশোধনাগারের বন্দিরা মুক্ত সংশোধনাগারে যাবার সুযোগ পাচ্ছেন। ছয়জন বন্দি আবাসিকের নাম চূড়ান্ত হয়েছে, তাঁরা কারা দপ্তরের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় রয়েছেন।