মহুয়া চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: ১৮ নভেম্বর পড়ছে অগ্ৰহায়ণ মাস। আর তারপরই বিয়েবাড়ির ডাক আর আপনার চিন্তার ভাঁজ কপালে , নিস্প্রভ ত্বক আর খসখসে চুলে দামি পোশাক বা মেকআপ কোনওভাবেই ফুটে উঠবে না; কিন্তু হাতে অঢেল সময়ও নেই যে ঘন্টার পর ঘন্টা ত্বক আর চুলের পরিচর্যায় ব্যয় করবেন। তাহলে উপায়? উপায় আপনাদের রান্নাঘরে, ছাদ বাগানে বা ব্যলকনি বাগানে। প্রতিদিন ১৫ মিনিট নিজের জন্য রাখুন ব্যস আর ম্যাজিক দেখুন। তাহলে শুরু করা যাক। সারাবছর আপনার ত্বক যেমনই থাকুক না কেন শীত পড়তে পড়তেই তা শুষ্ক হতে শুরু করে তাই অয়েল বেস মেকআপ আর রূপটান ব্যবহারে আনতে হবে।
প্রতিদিন স্নানের আগে অলিভ অয়েল আর মধু গরম জলে বসিয়ে গরম করে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিয়ে সারাগায়ে ভালোভাবে মেখে নিন, ত্বককে তেল শুষে নিতে দিন, উষ্ণ গরম জলে যেকোনো আপনার পছন্দের এসেন্সিয়াল অয়েল দিন, ডিফিউজ হতে দিন। এবার কাঁচা দুধের সঙ্গে বেসন বা মুসুর ডাল বাটা, অল্প মুলতানি মাটি, টমেটো, অ্যালোভেরা মেশান, গায়ে মাখুন, হাল্কা হাতে ঘসতে থাকুন এতে ময়লা সহজেই ত্বক থেকে আলগা হয়ে যাবে। স্নান করে লোশন প্রয়োজনে মাখুন, আর বাড়ীতে থাকলে আমন্ড বা অলিভ অয়েল ভেজা ত্বকে লাগিয়ে নিন। চেষ্টা করবেন এই পরের তেলটা বাথরুমেই ব্যবহার করতে , বাথরুমের উষ্ণ পরিবেশে ত্বক তেল শুষে নেয় তাড়াতাড়ি , এই রেমেডি সকলের জন্যই উপকারী।
চুলের ক্ষেত্রে আমলকীর রস ও ভার্জিন কোকোনাট অয়েল মিশিয়ে ঘুম থেকে উঠেই মাথায় লাগিয়ে নিন, চেষ্টা করুন ২ ঘন্টা যেন তেল অ্যাবর্জভেশনের সময় পায় তারপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার। হোমমেড ব্যবহার করতে চাইলে ব্যবহার করা লিকার চাপাতা ফুটিয়ে লেবুর রস মিশিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় মাথায় ঢালুন আর জল দেবেন না, এতে যদি অসুবিধে হয় চুল মুছে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। ১৫ দিন টানা এই দুই রেমেডির ব্যবহার আপনার ত্বক ও চুলের বদল ঘটাবেই। এবারে কর্মরতাদের জন্য কিছু টিপস — কর্মরতাদের জন্য রাত হল সবচেয়ে সেফ টাইম ত্বকচর্চার। প্রথমেই কাঁচা দুধে তুলো ডুবিয়ে মুখ,গলা,হাত পরিষ্কার করে দিন, ৫ মিঃ ছেড়ে দিন, ধুয়ে নিন কুসুম গরম জলে। হলুদ যদি সহ্য হয় তাহলে তো কেয়াবাৎ! এক চামচ কাঁচা হলুদের রস, একচামচ টমেটো পেস্ট ওহাফ চামচ মধু মেশান; মুখে গলায় হাতে মেখে নিন, ১০ মিঃ রাখুন। ধুয়ে নিয়ে নাইট ক্রীম মাখুন। এটা অ্যান্টি এজিং ও সানট্যানে উপকার করে মারাত্মক।
দই থেকে ঠান্ডা না লাগলে কমলালেবুর খোসা গুঁড়ো কিনতেও পাওয়া যায়, নিজেও বাড়ীতে বানিয়ে নিতে পারেন; এই পাউডার নিন একচামচ, জল ঝরানো দই একচামচ, পারলে মধু দিন কয়েকফোঁটা আর অবশ্যই অরেঞ্জ অয়েল। ভালোভাবে মিশিয়ে কাঁচা দুধে মুখ পরিষ্কার করে লাগিয়ে নিন, ১৫ মিঃ পর ধুয়ে নিন। এটা স্কিনে টনিকের মতো কাজ করে, জেল্লা ফেরায়, এজিং প্রসেসকে স্লো করে। অরেঞ্জ পাউডারের বদলে লেমন পিল পাউডার ও ব্যবহার করতে পারেন, তা না থাকলে কাঁচা খোসাও মিক্সারে দিয়ে পেস্ট করে লাগাতে পরেন। পাকা পেঁপে খেতে ও মাখতে দুই অবস্থাতেই ভালো ফল দেয়। একটুকরো পেঁপে ঘসে নিন বা চটকে নিন, এর মধ্যে মুলতানি মাটি মিশিয়ে স্মুথ পেস্ট বানান ও প্রয়োজনীয় স্থানে মেখে আধশুকনো হলে দুধে তুলো ভিজিয়ে আস্তে আস্তে তুলে দিন, ধুয়ে ক্রীম মাখুন। পেঁপে স্কিনকে মসৃণ করে আর মাটি পরিষ্কারের সাথে স্কিনকে টোন করে। যতই সানস্ক্রীন ব্যবহার করুন না কেন বা রোদে নাও বেরোন রান্নার কারণেও দীর্ঘ সময় গ্যাসের সামনে থাকলে কালচে ছোপ পড়েই যায়। একে তাড়ানোর জন্য বেসন, হলুদের রস ও দইয়ের মিশ্রণ প্রতিদিন ব্যবহার করতেই হবে, তবে দীর্ঘদিনের রোদেপোড়া ত্বক উজ্জ্বল হতে সময় নেবে কিন্তু হবে, নিরাশ হবেননা আর কেমিকেল প্রোডাক্ট অন্তত মুখে না লাগানোই ভালো। স্ক্রাবারও ঘরোয়াই রাখুন, যেমন সুজি, চালের গুঁড়ো, ওটমিল, সরময়দা, কফি। সরময়দায় কফি, মধু, কলা মিশিয়ে নিয়ে সারাগায়ে ভালোভাবে ঘসে নিন দেখবেন ময়লা উঠে চকচকে ভাব বোঝা যাচ্ছে। এরপর কিন্তু ডিপ ময়শ্চারাইজেশন প্রয়োজন।
ওটস গুঁড়ো করে নিন, লেবুর রস, কাঁচা দুধ মিশিয়ে নিন দরকারে জল ও দিতে পারেন। কুসুম গরম জলে এসেন্সিয়াল অয়েল ফেলে রাখুন, ঐ জল গায়ে ঢেলে তারপর ওটসের মিশ্রণ ঘসতে থাকুন, আধশুকনো হলে আবারো জল ঢেলে নিয়ে ধুয়ে জল গায়েই তেল মাখুন, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে মুছে নিন , লোশন লাগান। এটাও সবধরণের ত্বকে প্রযোজ্য।
চোখের কালি তুলতে গোলাপ জল, শসার রস, ব্যবহার করা গ্ৰীণ টি-ব্যাগ, আলুর রস আর রাতে আমন্ড অয়েল আপনার পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
অ্যালোভেরা প্রায় সবার ত্বকে ও চুলে স্যুট করে। নিয়ে নিন এই জেল , দুটো ডিমের কুসুম, মধু, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, কলা। লেবু আর কফি অপশনাল। উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে স্মুথ পেস্ট তৈরি করুন, কাঠের চিরুনি দিয়ে উল্টেপাল্টে চুল আঁচড়ান, সিঁথি করে এই পেস্ট চুলের গোড়ায় লাগিয়ে শুকোতে দিন আধঘন্টা, শ্যাম্পু করুন, কন্ডিশনারের প্রয়োজন নেই।
মেয়োনিজ ও চুলের জন্য খুব ভালো, খুব শুষ্ক চুলে এটা ম্যাজিক দেখায়। চুলের লেন্থ অনুয়ায়ী মেয়োনিজ আর তিন চামচ মধু নিয়ে ফেটিয়ে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত মেখে নিন। একঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করুন, কন্ডিশনার ও লাগান।
মোটামুটি এইভাবে ঘরোয়া চর্চা করলেই সুফল মিলতে বাধ্য, তবে প্রতিদিনই ধারাবাহিক ভাবে করতে হবে, মনে পজিটিভ চিন্তা থাকতে হবে, জল ও ফল খেতে হবে, এসিতে থাকলে ২ ঘন্টা পরপর শরীরের খোলা অংশে ক্রীম মাখুন। বাড়ীর খাবার ও মিনারেল ওয়াটার খেতে পারলে বেশী ভালো। ইনস্যান্ট চমকের জন্য শিট মাস্ক ব্যবহার করে তারপর মেকআপ। এইবার সেজেগুজে বেরিয়ে পড়ুন বিয়েবাড়ির উদ্দেশ্যে, ঘাড় ঘুরিয়ে আপনাকে দেখতে বাধ্য সবাই, তবে বাড়ী ফিরে ভালোভাবে মেকআপ তুলে কাঁচা দুধ অ্যাপ্লাই করতে ভুলবেন না। সৌন্দর্য্য আর শ্রীবৃদ্ধি ঘটুক সকলের ।
আরো পড়ুন :ত্বকে নারকোল তেল লাগানোর উপকারিতা কী? জেনে নিন আরও একবার