সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি : দিন সাতেক আগেও কদমতলার মোমো-চাউমিনের পসরা সাজিয়েছেন অরবিন্দ প্রসাদ। লকডাউনের ফলে বাধ্য হয়ে তিনি নিজের ব্যবসা পালটে নিয়েছেন। শনিবার দেখা গেল ফাস্ট ফুডের গাড়ি সরিয়ে রেখে তিনি রাস্তার পাশে আলু, পেঁযাজ সহ অন্য শাকসবজি নিয়ে বসেছেন। তিনি জানালেন, লকডাউনের জেরে এখন আর কেউ মোমো-চাউমিন খেতে আসে না। একমাত্র শাকসবজি কিনতেই মানুষ বাইরে আসছে। তাই সংসার চালাতে তিনি এখন সবজি বিক্রি করছেন। আয় আগের থেকে কমে গেলেও কোনও ক্রমে সংসার চলছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে লকডাউনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর জেরে জলপাইগুড়ি শহরের দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, ফুটপাথে হকার থেকে শুরু করে এই ধরনের পেশার সঙ্গে যুক্ত একটা বড় অংশের মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। শনিবার সকালে ইন্দিরা কলোনি, দিনবাজার, স্টেশন বাজার সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন কিছু সবজি বিক্রেতার মুখ দেখা গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তাঁরা কেউই আগে সবজি বিক্রি করেননি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে এই পেশায় এসেছেন তাঁরা। কারণ লকডাউন হলেও সাধারণ মানুষকে সবজি কিনতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর লক্ষ্য রেখে এখন অনেক অন্য পেশার মানুষ সবজি বিক্রেতা হয়ে গিয়েছেন। রাজবাড়িপাড়া স্ট্যান্ডের গাড়ির চালক উজ্জ্বল বসাক এদিন ইন্দিরা কলোনির বাজারে মাটিতে বস্তা বিছিয়ে সবজি বিক্রি করেছেন। উজ্জ্বল বলেন, কোনও দিন ভাবতে পারিনি এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। এত বছর গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এখন সবজি বিক্রি করতে দাঁড়িপাল্লা ধরতে হচ্ছে।
কলের মিস্ত্রি হিসেবে গৌতম মণ্ডল শহরের পরিচিত মুখ। শহরের একাধিক বহুতলের জলের লাইন গৌতমের হাতে তৈরি। এখনও কয়েকটি নির্মীয়মাণ বহুতলের কাজ তাঁর হাতে রয়েছে। কিন্তু লকডাউনের জেরে সেই কাজ এখন বন্ধ। সংসার চালাতে গৌতম ইন্দিরা কলোনিতে সবজি বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, সকালে আশপাশের গ্রাম থেকে সবজি নিয়ে আসছি। দুপুরের মধ্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। এভাবেই কোনও ক্রমে সংসার চালাচ্ছি। বিভিন্ন দোকান ঘুরে পিচবোর্ডের খালি কার্টন সংগ্রহের পর তা বিক্রি করে ভানু দেবনাথ সংসার চালাতেন। লকডাউনের ফলে একদিকে যেমন দোকানপাট বন্ধ, অপরদিকে যারা খালি কার্টন কিনত সেই ফ্যাক্টরিও বন্ধ। বাধ্য হয়ে তিনিও এখন সবজি বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, জীবনে অনেক সমস্যার মোকাবিলা করেছি। কিন্তু বর্তমানে এই পরিস্থিতি তৈরি হবে তা ভাবতেও পারিনি। কবে এই সমস্যা মিটে সব স্বাভাবিক হবে তাও জানি না। তবে দ্রুত নিজের পুরোনো পেশায় ফিরতে চাইছেন সকলেই।