মহুয়া চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: আমাদের জীবন সপ্তরংয়ে রাঙানো, রাগ, লোভ, ক্ষোভ, দয়া-মায়া, ভালবাসা, ঘৃণা আর বাৎসল্য ; এর মধ্যে রাগের আবার তিনটে ভাগ, আক্ষরিক অর্থে অবশ্য, রাগ তো দুঃখের বাহ্যিক রূপ , পূর্বরাগ প্রেমের প্রথম রূপ আর অনুরাগ দ্বিতীয় রূপ, বিরাগ মানে বিরহ। এই মিষ্টি প্রেমের সবকিছু মিষ্টত্ব রাগের হাতে পড়লে হয় অপমৃত্যু; সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরী। আজকে রাগকে চেনা এবং নিয়ন্ত্রণ করার কিছু কৌশল জানব।
১) ভালো লাগার কাজগুলো– জানা কথা কাজের চাপে আমাদের যাকিছু আগে ভালো লাগত সেই সবকিছুই ধীরে ধীরে চলে যায়, কিন্তু রাগকে বশীভূত করতে শরণাপন্ন হ’ন সেই কাজগুলোতেই। বাগান করা, রূপচর্চা, গান শোনা, নাচ করা, গল্প-কবিতা লেখা, বেড়াতে যাওয়া, বই পড়া সকাল -বিকেল হাঁটা এই সবেতেই আমরা খুঁজে নিতে পারি মনের শান্তি।
২) কোন বিষয়ে আপনার আর অন্যের মতপার্থক্য থাকতেই পারে তাই নিয়ে রাগ দেখানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আপনি বোঝাতে পারেন তাকে উদাহরণ দিয়ে, না বুঝলে সরে আসুন কিন্তু রাগের মাথায় কিছু বলা বা সেই মানুষটিকে ছোট করলে আখেরে আপনার ক্ষতি হতে পারে।
৩) যদি আপনি যেকোনো বিষয়ে লিখতে পছন্দ করেন তাহলে রাগের মুহূর্তে তুলে নিন পেন-খাতা, আর লিখে ফেলুন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনাবলী, লিখতে লিখতেই দেখবেন রাগ খানিকটা প্রশমিত হচ্ছে। জল খান সময় নিয়ে , শুনতে হাস্যকর হলেও জল মুখের ভিতর কিছু সময় রেখে তারপর গিলে ফেলুন, বেশ কয়েকবার এটা করুন ,মুখে ঘাড়ে জল দিন , গভীর শ্বাস নিন কয়েকবার, বসুন এবং ভাবুন সত্যিই কি এই রাগটা করার দরকার ছিল ? নিজেকে আরও একটু শান্ত রাখা কি যেতনা ? মনে রাখতে হবে সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ইজ বেষ্ট অ্যাসেসমেন্ট, তাই নিজেই নিজেকে চিনতে ও জানতে হবে।
৪) প্রচুর মানুষ আছেন যারা ‘পুরনো রাগী’ বলে পরিচিত তাদের যদি কেউ পাত্তা না দেয় তাদের পারদ আবারও চড়তে থাকে মনে হতাশা জমে অভিমান হয় এবং তা থেকে মানসিক রোগের শিকার হতে পারেন। তাই বন্ধুসুলভ ব্যবহার রাখুন তাদের সঙ্গে, হতাশায় ডুবতে দেবেন না। নিজেকে তাদের একজন সমব্যথী ভাবলেই দেখবেন আপনার রাগও ধীরে ধীরে কমছে।
৫) জীবনের বিভিন্ন ‘না পাওয়াগুলো’ থেকেও আসতে পারে রাগের মুহূর্ত, ‘সবাই সব পাচ্ছে আমি কেন পাবোনা’ এই ভাবনা থেকেও রাগ হতে পারে সাংঘাতিক, আর তা থেকেই বিভিন্ন অসামাজিক কাজে নিজেদের অজান্তেই জড়িয়ে যাওয়া, প্ল্যানিং, স্কিম, খুন, ধর্ষণ জাতীয় চিন্তা যদি মাথায় আসে তাহলেই সাবধান হন। আপনার অবচেতন মন আপনাকে দিয়ে জঘন্য কাজ করিয়ে নিতে চাইছে। ছাত্রাবস্থায় বা কেরিয়ারের শুরুর দিকে এই রকম চিন্তা মাথায় আসে, কখনো বাবা-মাকেই চরম শত্রু বলে হয়, সবকিছু তছনছ করে দিতে ইচ্ছে করে, এই সময়ে সাহচর্য, আগলে রাখা, মানসিক ভরসা দেওয়া খুব জরুরী।
৬) প্রেমে পড়া এবং প্রেম ভাঙা দুটোই হরমোন আর কেমিক্যালের কারিকুরি, বাড়িতে মানছেনা বা বিচ্ছেদ দুটি ক্ষেত্রেই রাগের মাত্রাছাড়া প্রকাশ দেখি আমরা, বকাবকি না করে বন্ধুর মতো মিশে জানুন গোপন বেদনার কথা তারপর তাকে বোঝান। মনে রাখতে হবে আজ যদি রাগের চিকিৎসা না করেন কালকে কিন্তু সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে।
আলোচনার বাইরে থেকে গেলো কতশত রাগ ও তার কথা, নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয় জেনেও আমাদের চেষ্টাতো করতেই হবে বলুন, তাই আর দেরী না করে ঘর ও আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখুন এই অসহ্য রাগে কেউ কষ্ট পাচ্ছেনা তো ?
আরও পড়ুন : স্বাস্থ্য ও জীবনচর্চায় আজকের রাগ, আগামীর অসুখ