বিপ্লব হালদার, গঙ্গারামপুর: দেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারকে হটাতে গোপন আস্তানায় গিয়ে দাদুকে সহযোগিতা করেছেন৷ তার জন্য সহ্য করতে হয়েছিল নানা কষ্ট৷ তবুও হাল ছাড়েননি তিনি৷ চোখে-মুখে স্বপ্ন ছিল একটাই, দেশকে স্বাধীন করতে হবে৷ স্বাধীন হয়েছে দেশ৷ কিন্তু স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও লকডাউনে একবেলা না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে প্রয়াত বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকির নাতনি মাধবী তালুকদারকে৷
এখন বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই৷ ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মাধবীদেবী গঙ্গারামপুর থানার সামনে ফুটপাথে একটি কুঁড়েঘরে থাকেন৷ সেখানে নেই কোন বিদ্যুতের ব্যবস্থা৷ ঝাঁপতোলা কুঁড়েঘরে আলো-বাতাস ঢোকে না বললেই চলে৷ একটি চৌকিতে রান্না করা, খাবার খাওয়া, এমনকি ঘুমোতেও হয়৷ ছোট ছেলে বিভিন্ন জায়গা থেকে কচুর শাক তুলে বাজারে বিক্রি করে৷ মাধবীদেবী মন্দিরে কাজ করেন৷ মা ও ছেলের সামান্য আয়ে কোনওরকমে দিন পার হয়ে যায়৷ কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ায় মন্দির বন্ধ৷ ভালো করে বাজার না-লাগায় শাকও বিক্রি হয় না৷ এমন অবস্থায় এখন তাঁদের প্রবল সমস্যায় পড়তে হয়েছে৷ একবেলা খেয়ে না খেয়ে পার করতে হচ্ছে দিন৷
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মাধবী তালুকদার বলেন, ‘আমার দাদুরা ছিলেন চার ভাই৷ আমার নিজের দাদু ছিলেন প্রতাপ চাকি৷ আর ছোট দাদু ছিলেন বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকি৷ তিনি বিয়ে করেননি৷ তখন আমার বয়স ১০-১১ বছর৷ সেই সময় ছোট দাদু ব্রিটিশদের তাড়ানোর জন্য স্বদেশী আন্দোলন করতেন৷ আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দাদুর আস্তানায় গিয়ে সাহায্য করতাম৷ গঙ্গারামপুরে ভালো ঘরে বিয়ে হয়েছিল৷ কিন্তু এখন এই ফুটপাথে তাকি৷ ছোট ছেলে বাজারে কচুর শাখ বিক্রি করে৷ যা আয় হয় তা দিয়ে কোনওরকমে চলে যায়৷’
তিনি জানালেন, ‘এখন লকডাউনে একটু অসুবিধার মধ্যে চলতে হচ্ছে৷ কারণ, কারোর কাছে কিছু চাইতে পারিনি না৷ দু’একজন চাল-ডাল দিয়ে গিয়েছে৷ হাত পুড়িয়ে সেটাই রান্না করে খাচ্ছি৷ কতদিন যে এভাবে চলবে, ভেবে পাচ্ছি না৷’ এবিষয়ে বিধায়ক গৌতম দাস বলেন, বিষয়টি জানা নেই৷ খোঁজখবর নিয়ে তাঁর খাবারের ব্যবস্থা করা হবে৷