ডিজিটাল ডেস্কঃ অল্প বয়স এবং হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু যেন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। সিদ্ধার্থ শুক্লা, শেন ওয়ার্ন, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়- প্রত্যেকের মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, হৃদরোগে বয়স এখন আর ফ্যাক্টর নয়। বরং চিকিৎসার সুযোগ নাও পেতে পারেন। কিন্তু অল্প বয়সে হৃদরোগের সমস্যা কেন বাড়ছে? প্রতিরোধের উপায়ই বা কী? জানালেন শিলিগুড়ির নিবেদিতা নার্সিংহোমের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয় সান্যাল
বর্তমান সময়ে অল্পবয়সি বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে হৃদরোগের সমস্যা বাড়ছে। এর পেছনে কারণ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, প্রায়শই শুনে থাকি। এটাও জানি যে, বেশিরভাগ কারণই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং শেষদিন পর্যন্ত সুস্থ থাকতে পারি। কিন্তু অনেকেই আমরা সেসব মানা তো দূর, রোগ প্রতিরোধের চেষ্টাই করি না।
বিভিন্ন কারণের মধ্যে জীবনধারায় পরিবর্তন অন্যতম। ব্যস্ত জীবনে অসময়ে ঘুমোনো, পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার না খেয়ে তেলেভাজা ও অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবারের দিকে ঝোঁক সামগ্রিক ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ব্লকেজ তৈরি হয়। পরবর্তীকালে ব্লকেজগুলি অবাধ্য হয়ে ওঠে এবং হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়।
তাহলে আমরা কী করতে পারি? অনিয়মিত জীবনযাপন এবং কাজের চাপের মধ্যে ভারসাম্য আনতে যোগা করতে পারেন। পরিবারকে যথেষ্ট সময় দিন। সবসময় কাজ কাজ করে ছুটবেন না। সর্বোপরি খুশিতে থাকুন, আনন্দে থাকুন। এক্সারসাইজ হিসেবে দৌড়ানো, সাইক্লিং, সাঁতার কাটা বা খেলাধুলো করতে পারেন। তাই বলে নিজেকে পেশিবহুল দেখাতে গিয়ে বেশি করে পেশির ব্যায়াম করবেন না। কারণ, অতিরিক্ত ওজন হৃদপেশির ঘনত্ব বাড়াতে পারে। ফলে হৃদয়যন্ত্রে সমস্যা হতে পারে। এছা়ড়া যাঁরা এমনিতেই খুব চাপে থাকেন, তাঁদের মধ্যে লাইফস্টাইল ডিজিজ যেমন উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবিটিস বেড়ে যায় এবং এভাবেই শুরু হয় রোগব্যাধির দুষ্টচক্র।
ওজন কমানোর দিকেও নজর রাখতে হবে। কেউ একবার মাত্র উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেলে তার ওজনেও সেটা যুক্ত হয়।অতিরিক্ত ওজন সরাসরি হৃদরোগের সমানুপাতিক। সময়ের সঙ্গে ওজন কমান, যাতে কোমরের নিতম্বের মাপ পুরুষদের ০.৯ এবং মহিলাদের ০.৮-এর কম থাকে।
এবার দেখা যাক, হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়? দেখুন, বুকে ব্যথাটা একটা উপসর্গ। এই ধরনের ব্যথায় বুকে সাধারণত চাপ অনুভূত হয়। মনে হয় কেউ পিষছে। কারও বা মোচড় দিয়ে ব্যথা হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক চূড়ান্ত ঘটনা। তার আগে হঠাৎ করে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে রক্ত সরবরাহ থমকে যায়। এতে হৃদযন্ত্রের এক বা একাধিক অংশ কম রক্ত পায় এবং সেখানে অ্যাটাক হয়। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বলে।
এখন বলতে পারেন, এই ঘটনাকে আমরা গুরুতর কেন বলি? কারণ, হৃদযন্ত্র হল কেন্দ্রীয় পাম্প, যা শরীরের সব অংশে রক্ত সরবরাহ করে। কম রক্ত সরবরাহের ফলে শরীরের এক বা একাধিক অংশ দুর্বল হয়ে পড়লে যান্ত্রিক এবং ছন্দ উভয়েই ব্যাঘাত ঘটে।
তাহলে কোল্যাপস কেন হয়? এর কারণ হল, হার্ট অ্যাটাক সংক্রান্ত বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে ছন্দ বিগড়ে গেলে হৃৎপিণ্ডের অভ্যন্তরে হঠাৎ করেই রক্ত সরবরাহ কমে যায় এবং কখনও হৃদযন্ত্রটাই থেমে যায় এবং হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী হাসপাতালে পৌঁছানোর সময় পান। সেক্ষেত্রে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
প্রশ্ন হল, বুকে ব্যথা হলে কী করা উচিত? দ্রুত ইসিজি করাতে হবে। অ্যান্টাসিড নেবেন না। রোগনির্ণয়ে সমস্যা হতে পারে। পরীক্ষানিরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়লে ছ’ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত, যাতে দ্রুত জমাট রক্ত গলানোর ওষুধ দেওয়া যায়। পাশাপাশি সম্ভব হলে অ্যাঞ্জিওগ্রাফি এবং অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করাতে পারলে সব থেকে ভালো। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, এই পুরো প্রক্রিয়ার সময়টা ৯০ মিনিট থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
জানেন কী, ঘুম সংক্রান্ত ব্যাধিও হৃদরোগের কারণ, যা ওএসএ নামে পরিচিত। দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদরোগের কারণ হতে পারে। এছাড়া আজকাল তরুণদের মধ্যে মাদকের নেশা বেড়েছে, এটাও কিন্তু উচ্চ মাত্রায় হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
যাঁদের রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল রয়েছে, তাঁদের চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। এছাড়া স্ট্যাটিন ড্রাগ দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নেবেন। মনে রাখবেন হৃদরোগ প্রতিরোধযোগ্য। বিভিন্ন থেরাপিউটিক ব্যবস্থার সাহায্যে এই রোগ এড়ানো যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ যে রোগ কেড়ে নিল অভিষেক, ওয়ার্নকে