দেবদর্শন চন্দ, কোচবিহার : ডায়াবিটিস রোগীদের কথা মাথায় রেখে বিশেষ ধান চাষে সাফল্য পেল উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তেলেঙ্গানা সোনা নামের ওই ধানের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মান সাধারণ চালের তুলনায় অনেকটাই কম। ফলে এই চালের ভাত খেলে রক্তে গ্লুকোজের হার বৃদ্ধি অনেকটাই কম হবে বলে দাবি উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানী অশোক সাহার। এই বছরেই ১০ জন ডায়াবিটিস রোগীকে এই চাল খাইয়ে রক্তে সুগারের ওঠানামার উপর বিশেষ গবেষণা চলবে।
জৈব পদ্ধতিতে করা তেলেঙ্গানা সোনা বা সুগার ফ্রি চাষে এবার সাফল্য পেয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের সহায়তায় পরীক্ষামূলকভাবে হলেও সাফল্য পেয়েছেন জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারের দুই কৃষক। এখন প্রশ্ন হল, কী এই সুগার ফ্রি ধান? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যে সব চালে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মান ৫৫-র নীচে থাকে, তাদের সুগার ফ্রি ধান বলা হয়। তেলেঙ্গানা সোনা-র গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫৫-র নীচে। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে এই ধান চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলে তাঁদের দাবি।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্য বিজ্ঞান বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ সাদা চালে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৬৫-র উপরে থাকে। অশোকবাবু বলেন, উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তেলেঙ্গানা সোনা নিয়ে গবেষণা চলছে। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে হওয়া এই তেলেঙ্গানা সোনা চাষে সাফল্য মিলেছে। আশা করছি, আগামী বছর বেশি পরিসরে এই ধানের চাষ করতে পারব। এবং কোচবিহারের ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য এই ধান উপহার দিতে পারব।
তেলেঙ্গানা সোনা ধান সাধারণত খারিফ মরশুমের ধান। জুনের ১৬ তারিখের মধ্যে এই ধানের চারা বসাতে হবে। সেপ্টেম্বরের শেষ বা খুব বেশি হলে অক্টোবরের ১৫ তারিখের মধ্যে এই ধান তুলে ফেলতে হবে। কেমন স্বাদ এই চালের? স্বাদে পুরোনো মাসুরি চালের থেকেও খেতে ভালো। একেবারেই সরু এই চাল।
জৈব পদ্ধতিতে তেলেঙ্গানা চালের ফলনে জোর দিয়েছে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। গতবছর জলপাইগুড়িতে রতন সরকার ১৫ বিঘা ও কোচবিহারের ঢাংঢিংগুড়ি এলাকার কৃষক বীরেন রায় দুই বিঘা জমিতে এই ধান চাষ করেছিলেন। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করায় জলপাইগুড়িতে বিঘা প্রতি ৭ মন এবং কোচবিহারে ৯ মন ফলন পাওয়া গিয়েছে।
কৃষি বিজ্ঞানীদের দাবি, তাঁদের কাছে এই চালের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কোম্পানিও এই বীজ চাইছে। তাঁরা জানিয়েছে, কোচবিহারে চাষ হওয়া এই ধানের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫২.৫, যা ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য অনেকটাই নিরাপদ। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে হওয়া এই চাষে ১৪ থেকে ১৫ মন ধান বিঘাপ্রতি পাওয়া গিয়েছে। অশোকবাবু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ২০০ জন ডায়াবিটিস রোগী এই চাল সংগ্রহ করবার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন : পথ দুর্ঘটনায় আহত ৪