ইসলামপুর : চিকিৎসক নন, গ্রুপ ডি কর্মীরাই ইসলামপুর সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের গাইনিকোলজি বিভাগে রোগী ভরতি করাচ্ছেন। রোগী ভরতির পর কলবুক পেযে চিকিত্সক আসছেন। ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার না থাকায় উদ্বোধনের দিন থেকেই নজিরবিহীনভাবে হাসপাতালের গ্রুপ ডি কর্মীরা এভাবে প্রসূতি বিভাগ চালু রেখেছেন। পাশাপাশি বিএসইউ (ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট) না থাকায় রোগী পরিসেবা ধাক্কা খাচ্ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিযে সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে দালালরাজের রমরমা বলে অভিযোগ উঠছে। এছাড়া হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক নিযোগ নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। হাসপাতালের গা ঘেঁষে ব্যাংয়ের ছাতার মতো গজিযে উঠেছে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের প্রাইভেট চেম্বার। চিকিৎসক সংগঠনগুলি দালালরাজের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য গাইনি বিভাগে মেডিকেল অফিসার না থাকার কথা স্বীকার করেছে। দালালরাজের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
দুবছর আগে ইসলামপুর সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের তড়িঘড়ি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে গাইনিকোলজি বিভাগ সুপারস্পেশালিটিতে স্থানান্তর করা হয। পরে সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ)-ও সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে সরিযে নিযে যাওযা হয। হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, সুপারস্পেশালিটিতে ছয়জন ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার প্রয়োজন। অথচ উদ্বোধনের পর দুই বছর কেটে গেলেও একজনকেও নিয়োগ করা হয়নি। ফলে গ্রুপ ডি কর্মীরাই প্রসবযন্ত্রণা নিযে আসা রোগীদের হাসপাতালে ভরতি করছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, মেডিকেল অফিসারের সই ছাড়া সরকারি হাসপাতালে রোগী ভরতি করা যায় না। এর ফলে কোন রোগীকে ভরতি করা জরুরি বা কাদের এখনও প্রসবের সময় হয়নি, এসব দেখার কেউ নেই। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা শুধুমাত্র কলবুক পেলেই রোগী দেখতে যাচ্ছেন। প্রসবের সময রক্তের প্রযোজনে রোগীর পরিজনদের ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে ছুটে আসতে হচ্ছে। রক্তের জোগাড় করতে তাঁদের দুঘণ্টার উপর কেটে যাচ্ছে। এমনকি মেডিকেল অফিসার না থাকায় রোগীদের রক্ত দিতেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের ভিতরে দালালরা এই বেহাল পরিস্থিতির কথা রোগীর
পরিজনদের শুনিয়ে তাঁদের নার্সিংহোমে পাঠাচ্ছে। রোগীপ্রতি দালালরা ৩০০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত কমিশন পাচ্ছে। হাসপাতাল চত্বরেই বিভিন্ন চিকিৎক ও নার্সিংহোমের ভিজিটিং কার্ড নিযে দালালরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। উত্তরবঙ্গ সংবাদ-এর কাছে এমনও নজিরও রয়েছে যে, প্রসবের সময় হয়নি বলে যে রোগীকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁর নার্সিংহোমে পরের দিনই সিজার হয়েছে। আবার ছুটি দিযে দেওযা রোগীকে উত্তরবঙ্গ সংবাদ-এর চাপে পড়ে নার্সিংহোম থেকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ফের সুপারস্পেশালিটিতে নিযে এসে সিজার করে প্রসব করানোর মতো ঘটনার নজির রয়েছে।
প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিযেনের ইসলামপুরের সভাপতি ডাঃ শান্তনু দত্ত বলেন, ‘সুপারস্পেশালিটিতে চিকিৎসক সংকট রযেছে। তবে চিকিৎসা পরিসেবায় দালালরাজ কোনোভাবেই কাম্য নয। সাংগঠনিকভাবে আমরা সবসময পরিসেবা উন্নযনের উপর জোর দিযে থাকি।’ তিনি বলেন, ‘মেডিকেল অফিসার না থাকায সিস্টার্স এবং গ্রুপ ডি কর্মীরাই রোগী ভরতি করেন। কলবুক পেলে চিকিৎক পৌঁছে যান। শীঘ্রই এই সমস্যা মিটে যাবে।’ অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের ইসলামপুরের সম্পাদক ডাঃ পার্থ ভদ্র বলেন, ‘উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছাড়া সুপারস্পেশালিটির উদ্বোধন একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এই হাসপাতাল কোনোভাবেই সুপারস্পেশালিটি নয়। ফলে অনেকেই পরিস্থিতির সুযোগ নেওযার চেষ্টা করছে। তাছাড়া এই হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে আর্থিক অনিযমের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে দালালরাজ কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ প্রসূতি বিভাগে গ্রুপ ডি কর্মীদের দিয়ে রোগী ভরতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত জানে। নিয়মের বিরুদ্ধের চেয়ে বড়ো কথা বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ভরতি হওয়ার পর চিকিৎক না আসা পর্যন্ত রোগীর কোনো চিকিৎসাই হয় না।’
হাসপাতাল সুপার ডাঃ নারাযণ মিদ্যা স্বীকার করেন, ‘সুপারস্পেশালিটিতে ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার নেই। বিএসইউ না থাকাতেও সমস্যা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। সুপারস্পেশালিটিতে দালালরাজ নেই বলেই জানি। তবে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই দালালরাজ সহ অন্য সমস্ত বিষয় নিয়ে তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
তথ্য ও ছবি- অরুণ ঝা