শুভজিৎ অধিকারী, শিলিগুড়ি : যে ছবির হাত ধরে বাংলা সিনেমার মরা গাঙে হঠাৎ জোয়ার, সেই দোস্তজীর সঙ্গে জড়িয়ে গেল উত্তরবঙ্গের নাম। বালুরঘাটের(Balurghat) তরুণী স্বাতীলেখা কুণ্ডুর নাম ধরে। ইতিমধ্যেই ছাব্বিশটি দেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে ঘুরে আসা প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের এই ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে নিবেদনের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রসেনজিৎ। টুইট করে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন অমিতাভ বচ্চন। এ ছবির সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে অভিভূত স্বাতীলেখা।
গায়ে রংয়ে গ্রাম্য ছাপ আনতে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন স্বাতীলেখা। কলকাতা থেকে ফোনে তিনি অকপট, সুযোগ পাওয়ার পর ত্বকের সমস্ত রকম পরিচর্যা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কোনও মেকআপ করতাম না। শহুরে ছাপ যাতে কোনওভাবে না থাকে, তার দিকে নজর রাখতাম। দেড়-দুমাস ধরে সর্ষের তেল, বোরোলিন মেখে রোদে বেরোতাম। শুটিংয়ের সময়ও তা বন্ধ হয়নি। পরিচালক প্রসূনকে ফোনে ধরা হলে বলছিলেন, শুটিংয়ের সময় প্রত্যন্ত গ্রামের নদীর চরে রোদের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকতেন স্বাতীলেখা।
বাবরি মসজিদ ধ্বংস, মুম্বই বিস্ফোরণের আবহে বাংলার এক সীমান্তবর্তী গ্রামের দুই খুদে পলাশ ও সফিকুলের বন্ধুত্বের গল্প দোস্তজী। সফিকুলের দিদির ভূমিকায় স্বাতীলেখা। ছোট থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত স্বাতীলেখার অধ্যবসায়ের প্রশংসা সিনেমার পরিচালকের মুখেও। ইতিমধ্যেই স্বাতীলেখার নিজের শহর বালুরঘাটের প্রেক্ষাগৃহে ছবির প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। সেখানে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে হইচই করে দোস্তজীকে স্বাগত জানিয়েছেন সিনেমাপ্রেমীরা। শুক্রবার থেকে শিলিগুড়ির মাল্টিপ্লেক্সেও দেখা যাবে দোস্তজী।
বালুরঘাট থেকে অতীতে ঋতা দত্ত চক্রবর্তী নাম করেছেন ছবিতে। স্বাতীলেখার উত্থান কী করে? তাঁর কাছে জানা গেল, ২০০৮ সাল থেকে থিয়েটারে অভিনয় শুরু তাঁর। বালুরঘাটে থেকেই পড়াশোনা পর্ব শেষ করে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যান নাটক নিয়ে পড়াশোনা করতে। দূরদর্শনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। রবীন্দ্রভারতীতে দুবছর স্নাতকোত্তরের পড়াশোনার সময়ে দোস্তজীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন স্বাতীলেখা। সেটা ২০১৮ সাল।
অডিশনে প্রথমে তাঁকে দেখে কিছুটা দমে গিয়েছিলেন প্রসূন। কারণ তাঁর প্রয়োজন ছিল গ্রামের মেয়ে চরিত্রের সঙ্গে সাযুজ্য থাকবে এমন কোনও অভিনেত্রী। কিন্তু স্বাতীলেখার ঝকঝকে চেহারার সঙ্গে তা মিলছিল না। কিন্তু তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যান প্রসূন।
নিজের প্রথম সিনেমার সাফল্য কেমন লাগছে? প্রশ্ন করতেই উচ্ছ্বাস স্বাতীলেখার গলায়। তাঁর কথায়, আমরা যে জায়গায় থেকে বড় হয়েছি, সেখান থেকে এই সাফল্যে খুবই ভালো লাগছে। এটা অন্যরকম অনুভতি। তবে চার বছরের অপেক্ষার পর, নানা প্রতিকূলতার শেষে দোস্তজী-কে মানুষ যেভাবে আপন করে নিয়েছেন তাতে অনেক বেশি খুশি তিনি। বিশেষ করে ছবির দুই প্রধান খুদে অভিনেতা আশিক ও আরিফের সঙ্গে কাটানো তিন মাসের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারছেন না তিনি। যেমন ভুলতে পারছেন না প্রসেনজিতের সঙ্গে প্রথমবার আলাপ হওয়ার স্মৃতি।
থিয়েটার নাকি সিনেমা, ভবিষ্যতে কাকে বেছে নেবেন? কোনও চিন্তা না করেই স্বাতীলেখা জানালেন, থিয়েটার তাঁর প্রথম ভালোবাসা, ফলে মঞ্চের অভিনয় থেকে তিনি কখনোই সরে যাবেন না। তবে সুযোগ পেলে সিনেমায় অবশ্যই অভিনয় করবেন। এখনও থিয়েটারেই মজে।
নিজের ছবির সাফল্য নিয়ে কী বলছেন পরিচালক? প্রসূনের কথায়, কোনও একশ্রেণির দর্শক নয়। গ্রাম, মফসসল ও আদ্যন্ত শহরের দর্শক আমার ছবি দেখছেন এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। একই মত স্বাতীলেখারও। তাঁরও মতে, দোস্তজীর গল্পের সঙ্গে দর্শকরা একাত্মবোধ করেছেন বলেই সাফল্য। মৌলিক গল্প হলে সাফল্য আসবেই।
প্রশ্ন হল, মৌনী রায়, মিমি চক্রবর্তী, সোনামণি সাহার মতো উত্তরবঙ্গের স্টারদের জায়গায় কি পৌঁছাতে পারবেন স্বাতীলেখা? আপাতত নিয়মিত অভিনয়ই তাঁর স্বপ্ন।