কিশনগঞ্জঃ মুসলিম হয়েও নিজের পালিত কন্যার বিয়ে দিলেন হিন্দু মতে বৈদিক রীতি মেনে। এমনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন গড়লেন কিশনগঞ্জের বাসিন্দা মহম্মদ কালাম। বৃহস্পতিবার হিন্দু ধর্মীয় রীতি মেনে ছাঁদনাতলায় কালাম সাহেব চার হাত এক করলেন পালিত কন্যা রাধার। বিয়ের সাক্ষী রইলেন প্রতিবেশীরা।
কিশনগঞ্জ পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মহম্মদ কালাম। পেশায় ঠিকাদার। বহু বছর আগে রাধা নামে এক শিশুকন্যাকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন কালাম সাহেব। তাঁর চার সন্তানের সঙ্গে রাধাকেও বড় করে তোলেন তিনি। সম্প্রতি রাধা স্নাতক হয়েছেন কিশনগঞ্জের একটি কলেজ থেকে। রাধাকে লালনপালন করলেও কোনও দিনই ধর্মান্তকরণের কথা বলা হয়নি মুসলিম পরিবারের তরফে। রাধা হিন্দু পরিবারের সন্তান হওয়ায় বাড়িতে নানান দেবদেবীর পুজো করতেন বলেও খবর।
স্নাতক হওয়ার পর বিবাহযোগ্য হওয়ায় রাধাকে তাঁর পালক পিতা মহম্মদ কালাম জিজ্ঞাসা করেন সে কোন ধর্মের পাত্রকে বিবাহ করতে চায়। উত্তরে রাধা জানিয়েছিলেন স্বধর্মের অর্থাৎ হিন্দু ছেলেকেই বিয়ে করতে চান। রাধার ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়েই হিন্দু পাত্র খোঁজা শুরু করেন কালাম ও তাঁর পরিবারের লোকেরা। অবশেষে রাধার জন্য পছন্দসই পাত্রও মিলে যায়। বৃহস্পতিবার ছিল রাধার বিয়ের দিন। হিন্দু বিয়ের রীতি জানা না থাকায় হিন্দু প্রতিবেশীদের সাহায্য নেন মহম্মদ কালাম। গায়ে হলুদ থেকে গঙ্গা নিমন্ত্রণ কিছুই বাদ যায়নি রাধার বিয়েতে। রাধার ইচ্ছেতে কন্যা সম্প্রদান করেন কালাম। বড় প্যান্ডেল বেঁধে জাঁকজমক করে রাতের লগ্নে বিয়ে হয় কালামের পালিত কন্যার। প্রচুর লোকের নিমন্ত্রণ থাকায় এলাহি আয়োজন ছিল রাধার বিয়েতে।
এই বিয়ে প্রসঙ্গে মহম্মদ কালাম বলেন, আমি বাবা, তাই মেয়ের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিয়েছি যাতে সে সুখী হতে পারে। পরিবারের লোকেদের সমর্থন পেয়েছি। তাই হিন্দু ছেলের সঙ্গেই বিয়ে দিয়েছি রাধার। এই কথা বলতে বলতে তাঁর দুই চোখ অশ্রু সজল হয়ে পড়ে। মুসলিম হয়েও কালাম সাহেবের এমন কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আত্মীয়স্বজন থেকে পাড়া প্রতিবেশীরা সকলেই।