প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সংক্ষেপে ‘এআই’। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় নয়া আন্দোলন৷ চিন্তাভাবনায় মানুষের মতন, অথচ রক্তমাংসের মানুষ নয়, এটি একটি অত্যাধুনিক কমপিউটার জেনারেটেড প্রোগ্রাম, যাকে নিয়ে মেতে উঠেছে আট থেকে আশি তামাম ভারতবাসী৷ এবার সেই ‘এআই’ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বেষ্টনী আরো মজবুত করতে।
ভারতের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ঘিরে, মঙ্গলবার দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়েছে দিল্লিকে। ত্রিস্তর বিশিষ্ট সুরক্ষা বলয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে লাল কেল্লা চত্ত্বরও৷ প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা আরও আঁটোসাটো করার জন্য ব্যবহার হচ্ছে ‘এআই’ প্রযুক্তিও। অটোমেটিক ফেসিয়াল রিকগনিশন (এএফআরএস) সিস্টেম লালকেল্লা চত্বরে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ মুখ দেখে অতিথি অভ্যাগতদের ঠিকুজি কুলুজি, পরিচয় ইত্যাদি বলে দেবে এই বিশেষ প্রযুক্তি। এই প্রথম কোনও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ব্যবহৃত হতে চলেছে ‘এআই’ বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল ৭-৩০ টায় লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সকাল ৭ টা ১০ মিনিটে মোদি প্রবেশ করবেন লালকেল্লা চত্বরে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে অংশগ্রহণ করবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রতিমন্ত্রী অজয় ভাট এবং প্রতিরক্ষা সচিব গিরিধর আরমানে। মোদিকে অভ্যর্থনা জানাবেন রাজনাথ স্বয়ং। লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন তিনিই। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান, চিফ অফ আর্মি স্টাফ জেনারেল মনোজ পাণ্ডে, চিফ অফ নেভি স্টাফ এডমিরাল আর হরিকুমার, চিফ অফ এয়ার স্টাফ এয়ার চিফ মার্শাল ভি আর চৌধুরী এবং স্থল, জল এবং বায়ু তিন সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেলরা। লালকেল্লায় পা রাখা মাত্র প্রথমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেওয়া হবে ‘ট্রাই সার্ভিস’ অন্তর্ভুক্ত বিশেষ ‘গার্ড অফ অনার’। অংশগ্রহণ করবেন স্থল, জল, বায়ুসেনা সহ দিল্লী পুলিশের ২৫ জন জওয়ান। নেভির পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকবেন ২৪ জন জওয়ান। মহিলা স্বশক্তিকরণের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই মহিলা মেজর নিকিতা নায়ার এবং মেজর জেসমিন কউর প্রধানমন্ত্রীকে সাহায্য করবেন পতাকা উত্তোলনে।
লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবছরও থাকবে বিশেষ অতিথি সমাগম। বিশেষ অতিথি হিসাবে লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে অংশ নেওয়ার জন্য সারাদেশ থেকে বিভিন্ন পেশার প্রায় ১৮০০ জনকে, তাদের সস্ত্রীক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ৪০০ জন সরপঞ্চ বা গ্রামের মোড়ল, ৩০০ জন কৃষি ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত ব্যক্তি, এছাড়া নতুন সংসদ ভবন সহ কেন্দ্রীয় ভিস্তা প্রকল্পের ৫০ জন নির্মাণ শ্রমিক; ৫০ জন খাদি কর্মী, যারা সীমান্ত রাস্তা নির্মাণ কর্মী এমন ৫০ জন সহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, নার্স এবং মৎসজীবীরাও থাকবেন এই সমারোহে। আগামীকাল স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে সমগ্র লালকেল্লা চত্বরকে। দিল্লির কনটপ্লেস ,আইটিও , ইন্ডিয়া গেট থেকে যে রাস্তা গুলি লালকেল্লার দিকে আসবে আজ বিকেল থেকেই সেখানে নিয়ন্ত্রণ করা হবে যান চলাচল। এই কারণে এই সমগ্র অঞ্চল জুড়ে অতিরিক্ত ২০,০০০ ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে, লালকেল্লা ঘিরে থাকছে ১০ হাজার দিল্লি পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী। এছাড়াও লালকেল্লার গেটে এবং প্রায় সমগ্র অঞ্চল জুড়ে ‘এআই’ তথ্য প্রযুক্তিতে এক হাজার ফেসিয়াল রেকগনাইসেশন ক্যামেরাও বসানো হয়েছে।
এছাড়াও প্রচুর সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে কার্যত মুড়ে ফেলা হয়েছে সমস্ত রাজধানী অঞ্চল। কড়া নজর রাখা হয়েছে যান চলাচলের ক্ষেত্রেও। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিল্লি মেট্রোর চালু হওয়ার সময়সীমা এগিয়ে নিয়ে নিয়ে আসা হলো ৩০ মিনিট। সাড়ে পাঁচটার পরিবর্তে এই দিন সকাল ৫ টা থেকে দিল্লির প্রত্যেকটি মেট্রো লাইনের শুরু হবে রেল পরিষেবা। তবে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সোমবার সকাল ছটা থেকে মঙ্গলবার দুপুর তিনটে পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে প্রত্যেকটি মেট্রো স্টেশনের পার্কিং এরিয়া। রাজঘাট, আইটিও লাল কেল্লা লাগোয়া চত্বরে ইতিমধ্যেই জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। থাকবে ড্রোন নজরদারি, অ্যন্টি-সাবোটেজ চেকিং-র জন্য কড়া টহল চলবে। যতক্ষণ মোদি লালকেল্লা চত্বরে থাকবেন, ততক্ষণ গোটা অঞ্চলকে ‘নো ফ্লাইং জোন’ করে রাখা হবে, উড়বে না কোনও ঘুড়িও। দিল্লির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কমান্ডো মোতায়েন করা হচ্ছে। বেশ কিছু বাজার এলাকা, মেট্রো স্টেশন, রেল স্টেশন, বিমানবন্দরে মোতায়েন থাকছে কমান্ডো বাহিনী। এছাড়াও, কৌশলগত এলাকায় এয়ার-ডিফেন্স গান, স্নাইপারও মোতায়েন করা হচ্ছে নিরাপত্তার খাতিরে।
ভারতের স্বাধীনতার ৭৭ বছর উপলক্ষ্যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে, দেশের জনগণকে ১৩ থেকে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি টুইটে লিখেছেন, ‘ভারতের জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা এবং জাতীয় ঐক্যের চেতনার প্রতীক ৷’ সেই সঙ্গে, জনগণকে জাতীয় পতাকার সঙ্গে তাদের ছবি ‘হর ঘর তিরাঙ্গা’ ওয়েবসাইটে আপলোড করার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই উপলক্ষ্যে দিল্লির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তের প্রায় ১২ টি স্থানে রাখা হয়েছে সেলফি পয়েন্ট। অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্সের মাই গর্ভমেন্ট পোর্টালে অনলাইন সেলফি প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছে। ১৫ থেকে শুরু করে ২০ তারিখ পর্যন্ত চলবে এই সেলফি প্রতিযোগীতা। অনুষ্ঠানের বিজয়ীদের প্রত্যককে ১০ হাজার টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা দিবসের আগে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালানকারী কাজ না হওয়ার জন্য সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী (বিএসএফ) ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ১১ অগাস্ট থেকে ১৭ অগাস্ট পর্যন্ত সতর্ক থাকারও নিদেশ দিয়েছেন। বিএসএফদের সীমান্তে কঠোর নজরদারি বজায় রাখবে হবে। পুলিশ কিন্তু ইতিমধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করে দিয়েছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। সারা বছরই সীমান্তে বিএসএফ নজর দেন, তবুও এই বিশেষ দিনগুলোতে সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী থেকে আরও বেশি নজরদারিতে রাখতে হবে। এই বিশেষ দিনের জন্য প্রচুর পুলিশ বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তার ব্যবস্থা আরও বাড়আনো হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এই বছরও ১৫ আগস্ট কড়া নিরাপত্তায়, ‘শান্তিপূর্ণ’ এবং ‘উদ্বেগহীন’ তেরঙার রঙে মেতে থাকতে দেখা যাবে ভারতকে, আশা কেন্দ্রের।